রংপুরের বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনার সঙ্গে চা ও আটা কেনার শর্ত জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। গত রোববার পর্যন্ত তেল কিনতে হলে এ শর্ত থাকলেও গতকাল সোমবার থেকে তা নেই। শর্ত ছাড়াই এখন বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। রংপুর জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হস্তক্ষেপে তেলের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের। রংপুরে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দূর করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আফসানা পারভীনের নেতৃত্বে গত রোববার দিনভর রংপুরের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সয়াবিন তেলের ডিলারদের সতর্ক ও বিভিন্ন গুদামে মজুত রাখা তেল আগের দামে বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। শহরের শাহী ভান্ডার, মণ্ডল স্টোর ও বাবুল স্টোরে মজুত করা সয়াবিন তেল বোতলের গায়ের দরে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আফসানা পারভীন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ডিলারদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের তেল কিনতে হলে সঙ্গে চা ও আটা কিনতে হয়েছে। সংগত কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ক্রেতাদের ওপর সেই শর্ত চাপিয়ে দেন। ২০ লিটার রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেলের বোতলে ২ কেজি চাপাতা কেনার শর্ত ছিল। একই সঙ্গে রান্না তেলের ২০ লিটারের বোতলে ৩ কেজি চাপাতা কিনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তবে গতকাল থেকে সেই শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেলের ডিলার ঘোষ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী পার্থ ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, কোম্পানি থেকে তাদের এই শর্ত পূরণ করতে হয়েছে। তাই খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছেও তারা এই শর্তে বিক্রি করেছেন। তবে সোমবার থেকে সেই শর্ত নেই। যার যার মতো তেল কিনতে পারছেন। এর সঙ্গে কোনো চা কিনতে হবে না। সেই সঙ্গে মজুত থাকা তেল আগের দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ বাজারের হেরণ স্টোরে গিয়ে দেখা গেল, তারা ফ্রেশ ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেল বিক্রি করছেন। ৫ লিটারের ফ্রেশ তেলের গায়ে লেখা আছে ৯৮৫ টাকা, খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে তা ২০ টাকা কমে ৯৬৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। একইভাবে ৩ লিটারের বোতলের গায়ের ৫৯৪ টাকার দর থেকে ১২ টাকা কমে ৫৮২ টাকা, ২ লিটারের বোতলের ৩৯৬ টাকার জায়গায় ৮ টাকা কমে ৩৮৮ টাকা এবং ১ লিটারের বোতলের ১৯৮ থেকে ৪ টাকা কমে ১৯৪ টাকা দরে ডিলারের কাছ থেকে কিনছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। হেরণ স্টোরের মালিক হেরণ বণিক সাংবাদিকদের বলেন, তেল কিনলে চা কিংবা আটা কিনতে হবে, এমন শর্ত থাকলেও এখন নেই। এই শর্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে ছিল। বোতলজাত তেল গায়ের দামের থেকে কমিশন বাদ দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিন সিটি বাজারে দেখা গেছে, বোতলের গায়ের দরেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পরিচিতজনদের কাছে এই তেল বিক্রি করা হচ্ছে বলে প্রত্যক্ষ করা গেছে। ৩ লিটারের পুষ্টি ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেল কিনেছেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি জানালেন, গায়ের দর থেকে সামান্য বেশি দিয়ে তেল কিনেছেন। এর বেশি কিছু বলতে চাননি ওই ক্রেতা। সিটি বাজারের হারুন স্টোরের মালিক হারুন মিয়া বলেন, তেল বিক্রিতে শর্ত থাকায় ক্রেতার কাছে আমরাই শর্ত দিয়ে বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ থেকে সেই শর্ত নেই। গায়ের দামেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, তেলের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সব সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। বাজারে যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় সেটাও লক্ষ্য করা হচ্ছে।