
পরিশ্রম, ধৈর্য্য, ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সাহসীকতার মধ্য দিয়ে যে কোন সংগ্রামই যে সফল হয় আবারও তার প্রমান করলেন পাবনার বক্তারপুর গ্রামের নুরুন্নাহার বেগম। সবজি আবাদ করে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারী হিসেবে ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদক পেয়ে দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
নারী কৃষক নুরুন্নাহার বেগম এবার লাউ বিক্রি করে লাখোপতি হয়েছেন। তার খামারে ৪ বিঘা জমিতে লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছ জুড়ে ঝুলে আছে শুধু লাউ আর লাউ। নুরুন্নাহার নিজ গ্রাম সহ আশ-পাশের এলাকার নারীদেরকেও কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার সফলতায় গ্রামের নারীরা সবজি, ফলমূল, পোল্ট্রি ও গাভির খামার করে এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছেন।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম জানান, স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে একদম অলস বসে থাকা তার ভালো লাগতো না।
২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান দেখে তার ইচ্ছে জাগে বসত বাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান করার। সেই থেকে শুরু, এর পর আর থেমে থাকেনি নুরুন্নাহার। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ, যা কিছু তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেন তা দিয়েই সারা বছরের সবজির চাহিদা মিটে যায়। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও হয়। প্রথম প্রথম স্বামী তার এসব কর্মকান্ডে কিছুটা বিরক্ত হতেন। এবার তার খামারে ৪ বিঘা জমিতে লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছ জুড়ে ঝুলে আছে শুধু লাউ আর লাউ। তিনি বলেন, খামারের উৎপাদিত লাউ ইতোমধ্যে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। এছাড়া এখনো গাছে অসংখ্য লাউ ঝুলে আছে।
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন জামাল বলেন, নুরুন্নাহার বেগম পরিশ্রম, ধৈর্য্য, অধ্যাবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রাম করে সাহসীকতার মধ্য দিয়ে কৃষি খামার করে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। দেশের সকল নারী কৃষককে ডিঙ্গিয়ে ২০১০ সালে নুরুন্নাহার সিটি গ্রুপ জাতীয় পুরষ্কার পান। ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক ও ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদক পেয়ে দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করে নুরুন্নাহার বেগম একজন মডেল খামারী হিসেবে ইতোমধ্যে পাবনা জেলা সহ গোটা দেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার সফলতা দেখে আশ-পাশের গ্রামের নারীরাও রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছেন।