
সবাই মিলে বকের বিরুদ্ধে বিচার নিয়ে গেল হুতুম প্যাঁচার কাছে। হুতুম প্যাঁচা পাখিদের সর্দার। বট গাছে সব পাখিকে নিয়ে বিচার বসল। হুতুম প্যাঁচা বগীকে বলল তোমার অভিযোগ পেশ কর। বগী তখন সবকিছু বলল। তখন হুতুম প্যাঁচা বককে বলল সত্যি কি তাই? বক তো কিছু বলতেই পারে না। আমতা আমতা করে বলল, হুজুর আমি এ বিষয়ে
কিছুই জানি না
করতোয়া নদীর পাড়ে বিশাল একটা বট গাছ আছে। সেখানে অনেক পাখি বাস করে। একটা কুটিরে বাস করে বক। সে নতুন বিয়ে করেছে। তার বউয়ের নাম বগী। বক প্রতিদিন একা একা বউকে রেখে অনেক দূরে ঘুরতে যায়, মাছ শিকার করে খায়। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় বউয়ের জন্য কিছু খাবার নিয়ে ঘরে ফেরে। বউ তো অনেক রাগ করে থাকে। কারণ বক নতুন বউকে ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। ফলে সারাদিন একা একা থাকতে হয়। অনেক বার বগী বককে বলেছে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য; কিন্তু সে নেয় না। একদিন তো বক আর বগীর মধ্যে অনেক ঝগড়া হলো। অনেক রাগারাগি হলো। বগী আর বকের সঙ্গে কথা বলছে না। বক রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে; কিন্তু বগী কথা বলছে না কিছুতেই। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল। বক সেদিন বাইরে গেছে। সে সময় বকের কুটিরের পাশে একটা পাখি এসে ডাকছে, ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও’। কয়েকবার ডাকার পর বগী তো রেগে-মেগে আগুন। ঘর থেকে বের হয়ে দিয়েছে একটা ধমক। সেই ধমক শুনে পাখিটা ভয়ে পালাল। কিছুক্ষণ পর আবার এসেছে। ডাকছে, ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও’। বারবার ধমক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। বারবার একই ঘটনা ঘটায় বগী ভাবছে, বক তার রাগ ভাঙানোর জন্য এ পাখিকে পাঠিয়েছে।
এটা ভেবে বগী আরও রেগে গেল। বকের নিজের বলার সাহস নেই, আর অন্যকে দিয়ে বারবার বলানো! বগী তার বাপের বাড়িতে খবর পাঠাল। সেখান থেকে কয়েকজন আত্মীয়স্বজন চলে এলো। সবাই মিলে বকের বিরুদ্ধে বিচার নিয়ে গেল হুতুম প্যাঁচার কাছে। হুতুম প্যাঁচা পাখিদের সর্দার। বট গাছে সব পাখিকে নিয়ে বিচার বসল। হুতুম প্যাঁচা বগীকে বলল তোমার অভিযোগ পেশ কর। বগী তখন সবকিছু বলল। তখন হুতুম প্যাঁচা বককে বলল সত্যি কি তাই? বক তো কিছু বলতেই পারে না। আমতা আমতা করে বলল, হুজুর আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তখন সেই পাখিকে হাজির করা হলো। তাকে যা-ই জিজ্ঞেস করা হয় সে শুধু বলে, ‘বউ কথা কও, বউ কথা কও’। তখন সবাই বুঝে ফেলল, এ পাখিটা বটগাছে নতুন বাসা বেঁধেছে। ওর মুখের বুলি হলো ‘বউ কথা কও’। বগী এবার তার ভুল বুঝতে পারল। আবার বকের সঙ্গে সুখের সংসার করতে লাগল।