
উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ হওয়া ভারতের উত্তর প্রদেশের বাবরি মসজিদের জায়গা হিন্দুদের মালিকানায় দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ভারতীয় আদালত। ভারতীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের রাজনীতির একটা বড় অংশ আবর্তিত হয়েছে এ মসজিদের জায়গাকে কেন্দ্র করেই। একনজরে মসজিদটির নির্মাণ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা দেখে নেওয়া যাক :
১৫২৮Ñ মোগল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেন।
১৮৮৫Ñ ফৈজাবাদ জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে চাঁদোয় টাঙানোর আবেদন জানালেন মহান্ত রঘুবর দাস। আদালতে আবেদন নাকচ হয়ে যায়।
১৯৪৯Ñ মূল গম্বুজের মধ্যে নিয়ে আসা হলো রামলালার মূর্তি।
১৯৫০Ñ রামলালার মূর্তিগুলোর পূজার অধিকারের আবেদন জানিয়ে ফৈজাবাদ জেলা আদালতে আবেদন করলেন গোপাল শিমলা বিশারদ।
১৯৫০Ñ মূর্তি রেখে দেওয়ার এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মামলা করলেন পরমহংস রামচন্দ্র দাস।
১৯৫৯Ñ ওই স্থানের অধিকার চেয়ে মামলা করল নির্মোহি আখড়া।
১৯৬১Ñ একই দাবি জানিয়ে মামলা করল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড।
১৯৮৬Ñ ১ ফেব্রুয়ারি, স্থানীয় আদালত সরকারকে নির্দেশ দেয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদের প্রবেশাধিকার দিতে। সে সময়ে রাজীব গান্ধী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮৯Ñ ১৪ আগস্ট, এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত স্থানে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে হবে।
১৯৯০Ñ ২৫ ডিসেম্বর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি গুজরাটের সোমনাথ থেকে রথযাত্রা শুরু করেন।
১৯৯২Ñ ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদকে শহীদ করে দেয়।
১৯৯৩Ñ ৩ এপ্রিল, অযোধ্যার জমি অধিগ্রহণ করার জন্য বিতর্কিত এলাকার অধিগ্রহণ আইন পাস হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টে এ আইনের বিভিন্ন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রিট পিটিশন জমা পড়ে। সংবিধানের ১৩৯ এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই রিট পিটিশন বদলি করে দেয় সুপ্রিমকোর্ট, যা এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।
১৯৯৪Ñ ২৪ এপ্রিল, সুপ্রিমকোর্ট ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকি মামলায় রায়ে জানায়, মসজিদ ইসলামের অন্তর্গত ছিল না।
২০০২Ñ এপ্রিল, বিতর্কিত স্থলের মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
২০০৩Ñ ১৩ মার্চ, সুপ্রিমকোর্ট বলে, অধিগৃহীত জমিতে কোনো রকমের ধর্মীয় কার্যকলাপ চলবে না। ১৪ মার্চÑ সুপ্রিমকোর্ট বলে, এলাহাবাদ হাইকোর্টে দেওয়ানি মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অন্তর্র্বর্তী আদেশ কার্যকর থাকবে।
২০১০Ñ ৩০ সেপ্টেম্বর, হাইকোর্ট রায় দেন, মসজিদের জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহি আখড়া এবং রামলালার মধ্যে সমবণ্টন করে দেওয়া হোক। এ রায়ে তিন বিচারপতি সহমত পোষণ করেননি। ২-১ ভিত্তিতে রায়দান হয়।
২০১১Ñ ৯ মে, অযোধ্যা জমি বিতর্কে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করে সুপ্রিমকোর্ট।
২০১৬Ñ ২৬ ফেব্রুয়ারি, মসজিদের স্থানে রামমন্দির তৈরির অনুমতি চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
২০১৭Ñ ২১ মার্চ, প্রধান বিচারপতি জেএস খেহর যুযুধান পক্ষগুলোকে আদালতের বাইরে সমঝোতার প্রস্তাব দেন।
৭ আগস্টÑ এলাহাবাদ হাইকোর্টের ১৯৯৪ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা আবেদনের শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করেন সুপ্রিমকোর্ট।
৮ আগস্টÑ উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল বোর্ড সুপ্রিমকোর্টে জানায়, বিতর্কিত স্থান থেকে কিছুটা দূরে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১১ সেপ্টেম্বরÑ সুপ্রিমকোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেন, বিতর্কিত জমির ব্যাপারে সদর্থক মধ্যস্থতার জন্য দুজন অতিরিক্ত জেলা বিচারককে ১০ দিনের মধ্যে মনোনয়ন করতে হবে।
২০ নভেম্বরÑ উত্তর প্রদেশের শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড সুপ্রিমকোর্টকে বলে, অযোধ্যায় মন্দির ও লখনউয়ে মসজিদ বানানো যেতে পারে।
১ ডিসেম্বরÑ এলাহাবাদ হাইকোর্টে ২০১০ সালের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করেন ৩২ নাগরিক অধিকার রক্ষা কর্মী।
২০১৮Ñ ৮ ফেব্রুয়ারি, সুপ্রিমকোর্টে সব দেওয়ানি মামলার আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
১৪ মার্চÑ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীসহ সব অন্তর্র্বর্তী আবেদন (যারা এ মামলার পক্ষ হতে চেয়েছিল) নাকচ করেন সুপ্রিমকোর্ট।
১৯৯৪Ñ ৬ এপ্রিল, রায়ে যে পর্যবেক্ষণ ছিল, তা বৃহত্তর বেঞ্চে পুনর্বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানালেন রাজীব ধাওয়ান।
২০ জুলাইÑ সুপ্রিমকোর্ট রায়দান স্থগিত রাখেন।
২৭ সেপ্টেম্বরÑ পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা নিয়ে যেতে অস্বীকার করেন সুপ্রিমকোর্ট। জানানো হয়, ২৯ অক্টোবর থেকে মামলার শুনানি হবে নবগঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চে।
২৯ অক্টোবরÑ সুপ্রিমকোর্ট জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যথাযথ বেঞ্চে মামলার শুনানি স্থির করে, ওই বেঞ্চই শুনানির দিন ধার্য করে।
২৪ ডিসেম্বরÑ সুপ্রিমকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, এ সম্পর্কিত সব আবেদনের শুনানি হবে ৪ জানুয়ারি থেকে।
২০১৯Ñ ৪ জানুয়ারি, সুপ্রিমকোর্ট জানান, তাদের তৈরি করা যথোপযুক্ত বেঞ্চ মামলার শুনানির তারিখ ১০ জানুয়ারি স্থির করবে।
৮ জানুয়ারিÑ সুপ্রিমকোর্ট পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ঘোষণা করে। শীর্ষে রাখা হয় প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। এছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন এসএ বোবদে, এনভি রামানা, ইউইউ ললিত এবং ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
১০ জানুয়ারিÑ বিচারপতি ইউইউ ললিত নিজেকে মামলা থেকে সরিয়ে নিয়ে সুপ্রিমকোর্টকে বলেন, ২৯ জানুয়ারি নতুন বেঞ্চের সামনে মামলার শুনানি শুরু করতে।
২৫ জানুয়ারিÑ সুপ্রিমকোর্ট পাঁচ সদস্যের নতুন সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে। নতুন বেঞ্চের সদস্যরা হলেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এসএ নাজির।
২৯ জানুয়ারিÑ কেন্দ্র সুপ্রিমকোর্টে বিতর্কিত অংশ বাদ দিয়ে বাকি ৬৭ একর জমি তাদের আদত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানায়।
২০ ফেব্রুয়ারিÑ সুপ্রিমকোর্ট জানান, মামলার শুনানি শুরু হবে ২৬ জানুয়ারি থেকে।
২৬ ফেব্রুয়ারিÑ সুপ্রিমকোর্ট মধ্যস্থতার কথা বলে, আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের কাজে লাগানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ৫ মার্চ দিন স্থির হয়।
৬ মার্চÑ জমি বিতর্ক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসা করা হবে কি না, সে সম্পর্কিত রায় দান মুলতবি রাখেন সুপ্রিমকোর্ট।
৯ এপ্রিলÑ নির্মোহি আখড়া কেন্দ্রের জমি ফেরানোর আবেদনের বিরোধিতা করে।
৯ মেÑ তিন সদস্যের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সুপ্রিমকোর্টে তাদের অন্তর্র্বর্তী রিপোর্ট জমা দেয়।
১৮ জুলাইÑ সুপ্রিমকোর্ট মধ্যস্থতা চালিয়ে যেতে বলেন, ১ আগস্ট রিপোর্ট জমা দেওয়ার দিন ধার্য হয়।
১ আগস্টÑ মধ্যস্থতাসংক্রান্ত রিপোর্ট বন্ধ খামে সুপ্রিমকোর্টে জমা পড়ে।
৬ আগস্টÑ সুপ্রিমকোর্ট জমি মামলায় দৈনিকভিত্তিতে শুনানির কথা জানান।
১৬ অক্টোবরÑ সুপ্রিমকোর্টে শুনানি শেষ হয়, রায় দান মুলতবি রাখা হয়।
২০১৯Ñ ৯ নভেম্বর, শনিবার সকালে ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায় দেন, বাবরি মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হবে।