ঢাকায় প্রথমবার যানবাহনের গতিসীমা সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০:০৮ | অনলাইন সংস্করণ

ঢাকায় যানবাহনের গতিসীমা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো মাসমিডিয়া ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়েছে। রাজধানীতে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ সম্পর্কে চালক ও সাধারণ মানুষকে অবহিত করতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
বুধবার (২৩ অক্টোবর ২০২৫) বিকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এর সম্মেলন কক্ষে ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন হয়।
এটি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস)-এর আওতায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করা বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএনসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন (এসইউপি, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি)।
এছাড়াও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান, বিআরটিসি’র মহাব্যবস্থাপক (পরিচালনা) মেজর মো. নিজাম উদ্দিন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) জ্যেষ্ঠ সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মো. মামুনুর রশিদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউর রহমান, ডিএনসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম এবং ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের কারিগরি পরামর্শক আমিনুল ইসলাম সুজন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিআইজিআরএস ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর ও অতিরিক্ত সচিব (অব.) মো. আবদুল ওয়াদুদ।
এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ৩০ সেকেন্ড, ৪৫ সেকেন্ড, ১ মিনিট ও ৯০ সেকেন্ড সময়ব্যাপ্তির ভিডিওচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যা ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সড়কের ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচার করা হবে। এসব ভিডিওচিত্রে রোড ক্র্যাশে নিহত তরুণ সংগঠক ও রাজনীতিক আরিফুল ইসলামের সহধর্মিণী রেবেকা সুলতানা নীলা অংশ নিয়েছেন। তিনি নিজের ও সন্তানের প্রিয় মানুষকে হারানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে চালকদের গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানান।
ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সড়কের পাশে সাইনবোর্ড আকারে স্থাপনের জন্য দুটি ভিন্ন ডিজাইনের পোস্টার তৈরি করা হয়েছে। এসব পোস্টারে গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রচারণা উপকরণ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ডিএমপি ও ডিটিসিএ’র মাধ্যমে প্রচার করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটির সড়কগুলোকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং এই উদ্যোগ আরও শক্তিশালীভাবে এগিয়ে যাবে।” তিনি বলেন, “সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে।”
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “সরকার গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ ক্যাম্পেইন চালক ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করবে।”
ডিএনসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “ঢাকার সড়কে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পথচারী, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাথ নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মোটরযান গতিসীমা বিষয়ে সচেতনতামূলক এই ক্যাম্পেইন আয়োজন করা হয়েছে।”
বিআইজিআরএস ইনিশিয়েটিভ কোঅর্ডিনেটর মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “বিআরটিএ মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ প্রণয়ন করেছে। এতে শহরের অভ্যন্তরে জাতীয় বা আঞ্চলিক মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতি ৪০ কিলোমিটার এবং অন্যান্য সড়কে ৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন সিটি করপোরেশনকে যৌক্তিক গতিসীমা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।”
২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাতে দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় নিহত হন তরুণ সংগঠক ও রাজনীতিক আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তার বন্ধু সৌভিক অর্জুন (৪৪)।
আরিফুলের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা নীলা বলেন, “ট্রাকটির গতি যদি কম থাকত, তাহলে হয়তো আরিফ ও অর্জুন আজও বেঁচে থাকত। অতিরিক্ত গতির কারণে আমার সন্তান পিতাকে হারিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সড়কে কোনো অকাল মৃত্যু কাম্য নয়। সবাই যদি ট্রাফিক আইন ও গতিসীমা মেনে চলে, তাহলে অনেক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব।”
ডিএনসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, “ঢাকায় রাত ৯টার পর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চলাচল করে। দিনেও যানজটের কারণে চালকরা সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত গতি নেয়। এই মানসিকতা পরিবর্তনে এই ক্যাম্পেইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
অনুষ্ঠানে বিআরটিএ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ, ব্র্যাক, নিরাপদ সড়ক চাই, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সিয়াম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ রোড সেফটি কোয়ালিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
