ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রংপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামে দ্বিগুন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

রংপুরে ভুট্টার বাম্পার ফলন, দামে দ্বিগুন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

রংপুর জেলায় ভূট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর কৃষকরা একরে ৯০ থেকে ১১০ মণ ভুট্টা পেয়েছিলেন। তারা এ বছর পাচ্ছেন একরে ১৪০ থেকে ১৭০ মণ ভুট্টা। গত বছরের চেয়ে দামও প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় বাজিমাত করেছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার জেলায় রবি মৌসুমে ১৯ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিলো। যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। আর চলতি খরিপ মৌসুমে ১০ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন।

মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬ নং মির্জাপুর ই্উনিয়নের ভূট্টাচাষী জুয়েল ইসলাম জানান গতবছরের চেয়ে এ বার ফলন ভাল পেয়েছেন । তিনি এ বছর এক একর জমিতে ভ’ট্টা চাষ করে ১শ মন পেয়েছেন। আর এক বর্গাচাষী আরজুর মা ২৪শতাংশ জমিতে ভূট্টা চাষ করে ২০ মন পেয়েছেন। তিনি বলেন ভূট্টাতে খরচ কম ফলন বেশী। তাই দাম বেশী পেয়েছেন।

জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চর ঘুরে দেখা গেছে, বালুচরে সবুজ আর সোনালী ফসলে ভরা। ক্ষেতগুলোতে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ভুট্টা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও বালুচরে রয়েছে বাদাম, ডাল, মরিচ, বেগুন, শিম, কপি, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের সফল।

পীরগাছা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার মধ্যে খরিপ-১ মৌসুমে ১ হাজার ৯৫০ এবং রবি মৌসুমে ২ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ভুট্টা চাষ করা হয়েছে তিস্তার চরাঞ্চলে।

পীরগাছার তিস্তা চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরে বালুচরে নানা জাতের ভুট্টা চাষ হলেও এ বছর তিস্তা সিড্স কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নুতন জাত ডালিয়া-৪৪৫৫ ও বাসুধা-১৬৫৫ চাষ বেশি হয়েছে।

তিস্তা সিডস কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই দুই ইউনিয়নে এ প্রায় সাড়ে ৪০০ একর জমিতে এ জাতের ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। পীরগাছার কান্দিনার চর গ্রামের ভুট্টা চাষী জামাল মন্ডল, দামুস্বর গ্রামের আব্দুল হক, ময়নুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন জানান, গত বছর স্থানীয় দোকানির কথায় তারা কয়েক জাতের ভুট্টা চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফলন ভালো হয়নি। চলতি বছর ডালিয়া-৪৪৫৫ ও বাসুধা-১৬৫৫ জাতের ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এবার ফলনের সঙ্গে ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা।

একই এলাকার কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছর দেড় একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৯০ মণ ফলন পেয়েছিলাম। সেই জমিতে এবার ১৪০ মণ ভুট্টার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাড়াই করে আরও ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর প্রতি মণ (৪০ কেজি) কাঁচা ভুট্টা ৪০০ এবং শুকনা ভুট্টা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। সেটি এ বছরে দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা প্রতি মণ (৪০ কেজি) ৮০০ টাকা এবং শুকনা ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ জাতটি নতুন। আমরা কৃষকদের নির্ভয়ে চাষ করতে অনুরোধ করেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাসে তারা চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখছেন। আসলে কৃষকদের মনে আস্থা আনাটাই বড় ব্যাপার।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (উদ্যান) শামিমুর রহমান বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় ও ‘তিস্তার চরাঞ্চলে যেমন ভুট্টার চাষাবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। এ বছর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। এর মধ্যে পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়ার তিস্তার চর ও চর বেষ্টিত এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে।’

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান চলতি বছর ভ’ট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে । চলতি মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন।

রংপুর,ভূট্টার বাম্পার ফলন,দামে দ্বিগুন,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত