ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চবির শাটলে জার্মান শিল্পীর রঙের ছোঁয়া

চবির শাটলে জার্মান শিল্পীর রঙের ছোঁয়া

হুইসেল বাজিয়ে প্রতিদিন সকালে নগরীর বটতলী থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে যাত্রা শুরু করে সেই বাহনটি হচ্ছে শাটল ট্রেন। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা এই ট্রেনটি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটি আবেগের নাম। এই ট্রেনকে ঘিরেই সবার রয়েছে রঙবেরঙের গল্প, নানা স্মৃতি।

এবার সেই শাটল ট্রেনে রঙের ছোঁয়া লাগিয়েছে সুদূর জার্মান থেকে আসা এক চিত্রশিল্পী।

একসময় নিয়ম করে এই ট্রেনের বগিগুলো রঙ করতো বগিভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির সংগঠনগুলোর কর্মীরা। তবে রাজনীতির 'মারপ্যাঁচে' প্রশাসনের সিদ্ধান্তে ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় বগি রঙ করা। দীর্ঘদিন পর আবার নতুন করে ফের রঙিন হল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন।

বিবর্ণ শাটল সজীব হয়েছে জার্মান নাগরিক লুকাস জিলেঞ্জারের গ্রাফিতি ও চিত্রকর্মে। তার সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী লিভিয়া। একাই দিন রাত কাজ করে ফুটিয়ে তুলেছেন এ দেশেরই বিভিন্ন চিত্র। এতে আছে রেলওয়ে স্টেশন, সংসদ ভবন, চট্টগ্রামের সিআরবি, সূর্যাস্তের দৃশ্য, সমুদ্র, রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্যের শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে আছে তরুণদের উজ্জীবিত করার গ্রাফিতি। আর এই সব কিছুই নিজের অর্থায়নে করেছেন লুকাস জিলেঞ্জার। টানা পরিশ্রমে বিবর্ণ শাটলে রঙ দিয়ে ফিরিয়েছেন 'প্রাণ'।

চবি নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক অরূপ বড়ুয়ার মাধ্যমের শাটল ট্রেন সম্পর্কে জানতে পারেন লুকাস। লুকাস গ্রাফিতি পৌঁছাতে চান তরুণদের কাছে। শিক্ষক আরূপ বড়ুয়ার কাছে শাটল ট্রেন নিয়ে জানতে পেরে লুকাস আগ্রহ প্রকাশ করে, ক্যানভাস হিসেবে বেছে নেন চবির শাটল ট্রেনকে। যেকোনো যানবাহনে গ্রাফিতি করাকে লুকাস তরুণদের কাছে পৌঁছানোর ভালো একটি মাধ্যম মনে করেন।

লুকাস চবিতে কাজ শুরু করেন বৃ্হস্পতিবার রাত থেকে । যখনই সময় পেয়েছেন কাজ করেছেন। বৈরি আবহাওয়ার বাধ সাধলেও কাজ থেমে থাকেনি তার। দিন-রাত টানা কাজ করে গেছেন। সোমবার রাতে কাজ শেষ করে গেছেন ঢাকায়, ২৭ জুলাই ফিরে যাবেন দেশ ছেড়ে। এমনটিই জানিয়েছেন শিক্ষক আরূপ বড়ুয়া।

আরূপ বড়ুয়া বলেন বলেন, লুকাস একজন প্রফেশনাল গ্রাফিতি আর্টিস্ট। বিভিন্ন দেশ ঘুরে তিনি এই কাজটি করে থাকেন। সে ঢাকায় একটি দাতব্য কাজ করতে এলে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। লুকাস মূলত যানবাহন কেন্দ্রীক কাজ করে থেকেন। সে যখন চবিতে আসে, সে আমাদের শাটল ট্রেনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এ কাজের মূল অর্থায়ন তিনি নিজেই করেন। ১৭ বছর ধরে লুকাস এই কাজ করেছেন। তার স্ত্রী লিভিয়া তাকে অকুষ্ঠ সমর্থ করেন এই কাজে। তিনি ডকুমেন্টারি করেন এগুলো নিয়ে। তিনি নিজেও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত।

লুকাস জিলেঞ্জার বলেন, ১৪ বছর বয়স থেকেই আমি গ্রাফিতির সঙ্গে যুক্ত, এখন আমার বয়স ৩৭। পুরো সময় জুড়েই আমি বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে গ্রাফিতি করেছি। আমি ঘুর‍তে ও আর্ট করতে ভালোবাসি। আমার খুব ভালো লাগছে আমি প্রজেক্টটি(শাটলে রঙ করা) শেষ করতে পেরেছি।

লুকাস বলেন, আমার প্রিয় বাহন হচ্ছে ট্রেন। এর বাইরেও অনেক যানবাহনে আমি গ্রফিতি করেছি, তবে ট্রেন আমার বেশি পছন্দের। কারণ এটা একটি চলমান(মোবাইল) ক্যানভাস। ফলে অনেক সংখ্যক মানুষের কাছে এটি পোঁছায়। তরুণদের কাছে পৌঁছাবে বলে আমি চবির শাটলকে বেছে নিয়েছি।

চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছিল লুকাস। সেখান থেকেই তিনি শাটল কীভাবে রাঙাবেন সেই থিম নিয়েছেন।

দীর্ঘদিন পর শাটল রঙিন হওয়াতে উচ্ছ্বাসিত চবির শিক্ষার্থীরাও। রঙিন এই শাটল রঙ লাগিয়েছে শিক্ষার্থীদের মনেও। কেউ ছবি তুলছে শাটলের সঙ্গে কেউ করছেন ভিডিও। নব রঙের আনন্দের ছোয়া লেগেছে শিক্ষার্থীদের প্রাণে। লুকাসের আর্টে বিবর্ণ শাটলে প্রাণ ফিরেছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।

ব্যাংকিং এন্ড ইসুরেন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মনিষা দাশ বলেন, আমরা আসলেই অনেক খুশি। শাটল যেমন নতুন রূপে সেজেছে, আমাদের মনও নতুন রূপ ধারণ করেছে। আমরাও যেন নতুন হয়ে গেছি।

দর্শন বিভগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী পুরবী ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমোশন হচ্ছে এই শাটল ট্রেন। নতুন আমার সব সময় পছন্দ করি। কিন্তু এটা(শাটলে রঙ) হচ্ছে পুরাতনের মধ্যে নতুনত্ব। ফলে আমাদের মধ্যে উন্মাদনা একটু বেশি।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার পর বড় ভাইদের কাছে অনেক শুনেছি আমাদের এই শাটল ট্রেন নানা রঙ্গে রঙিন থাকতো। বগিভিত্তি গ্রুপ গুলোর ভাইরা রঙ করতো। আমাদের দেখার সৌভাগ্য হয়নি, তবে দেখার ইচ্ছা ছিল তবে। সে দেখার তৃপ্তিটা মিটেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, গত ২৮ মার্চ জার্মান শিল্পী লুকাস জিলেঞ্জার আমাদের উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে শাটল ট্রেনের বগিগুলো নান্দনিক শিল্পকর্মের মাধ্যমে সাজানোর প্রস্তাব দেন। আমাদের শাটল ট্রেনে আগে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম ছিল। আমাদেরও শাটল ট্রেন সাজানোর পরিকল্পনা ছিল। আমরা তার প্রস্তাবটি বিবেচনা করে তাকে শিল্পকর্মের অনুমতি দেই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,শাটল ট্রেন,জার্মান শিল্পী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত