ছোট শিশু রফিকুল ইসলামের পেটে ব্যাথা। পেটে ব্যাথা শুরু হয় রাত সাড়ে ৮টার দিকে। বাবা শাহিন ইসলাম রফিকুলকে নিয়ে সেই রাতেই রওনা হন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদেশ্যে। তবে বাধ সাজে মাঝখানে দুই নদী ও চরের ১২ কিলোমিটার পথ। কোন রকমে নৈকার মাঝিকে পেলেও রত্রি বেলায় রফিকুলকে রামেক হাসপাথে আনতে সময় লেগে যায় প্রায় আড়াই ঘন্টা।
শুধু রফিকুলই নয় , চর মাজার দিয়ার এলকার প্রায় সারই একই গল্প। পদ্মার ওপাড়ের একটি সমৃদ্ধ গ্রাম চল মাজার দিয়ার। দুটি নদী ও মাঝখানে সাড়ে ১২ বর্গকিলোমিটারের একটি চর পেরিয়ে যেতে হয় সে গ্রামে। ভরা বর্ষায় পদ্মা যৌবনবতী থাকলে চরটি ডুবে যাওয়ায় নদীপথে যাতায়াত করা যায় সহজে। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় পদ্মায় হয়ে যায় মরা খালের মত। পানি না থাকায় জরুরি রোগি হাসপাতালে নেয়ার পাশাপাশি উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার চর মাজার দিয়ারের মানুষের দুর্ভোগ নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা সাড়ে ১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি চর। গ্রাম থেকে শহরের হাসপাতালে রোগি আনতে গেলে কিংবা গ্রামে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল বাজারজাত করতে হলে প্রথমে পদ্মার একটি শাখা নদী পাড় হতে হয় সেখানকার মানুষকে। এরপর চরের বালুতে কয়েক কিলোমিটার হেটে আসতে হয় মূল পদ্মার খেয়া ঘাটে। এরপর নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিয়ে তাদের আসতে হয় শহরের মূল ভূ-খন্ডে।
বর্ষার ভরা মৌসুমে নদীর মাঝখানে জেগে ওঠা চরটি তলিয়ে যায় পানিতে। তখন শহর থেকে গ্রামটিতে সরাসরি যাওয়া যায় নৌকায়। তবে এ বছর রাজশাহীতে বন্যা না হওয়ায় এবং উজান থেকে পদ্মায় অন্যান্য বছরের মতো পানির ঢল না আসায় যোগাযোগের সেই সৃবিধা পায়নি গ্রামের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ীভাবে জনদুর্ভোগ কমাতে চরটি ড্রেজিং করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
রাজশাহী চল মাজার দিয়ার এলকার পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মোঃ মিজান। তিনি বলেন, আনেক সময় আমাদের আপেক্ষা করতে হয়। শহর থেকে কোন জিনিস কিনতে আমারে প্রায় সারাটা দিনই চলে যায়। সালে নৈকার আভাব থাকে। পরে আবার ১২ কিলোমিটার পথ হেঁটে আসতে হয়। যদিও মটরসাইলের ব্যবস্থা আছে। তবে গরিব মানুষ এত টাকা দিয়ে আসতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটেই আসতে হয়।
চরটির সাবেক ম্বের শামীম ইসলাম বলেন, এখানকার লোজনকে আনেক কষ্ট করে যেতে হয়। নদী থেকে চোকেই দেখা যায় শহর তবে সেটি পার হতে আমাদের সময় লেগে যায় প্রায় আড়াই ঘন্টা। জরুরী রোগী ও চলের উৎপাদিত ফসল নিতে হয় আনেক কষ্ট করে।
চলের বাসিন্দা মরজিনা বেগম বলেন, আমাদরে চলের চরম দুঃখ। কোন কিছুই নেই াামাদের। শহর থেকে একটু দুরে কিন্তু আমার উন্নয়নের কোন কিছুই পায় নি। আমাদের কিছুই নেই। যাই ঘটে যাক না ক্যান ঐ নৌকাতেই আমাদরে যেতে হবে। জরুরী হলে আমাদের বেশি টাকা দিয়ে হলেও যেতে হয়।
চলের মাঠে ফসল ও পৌঁছাতে হয় বেশ কষ্ট ও খরচ করে। এখনকার চাষিদের তাই দাম নিয়ে বেশ সংশয় থাকে।
চরের দেড় বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন কৃষক মুসলেম উদ্দিন। ফলন ও ভালো হয়েছে। বতে প্রতিদিন বিকেলে এই ফসল নদী পার করেতেই চলে যায় মোট অঙ্কর টাকা।
মুসলেম বলেন, আমাদের ফসল প্রথমেমাঠ থেকে ট্রলিতে করে ছোট নদীর কাছে আনতে হয়। এরপর অঅবার সেগুলো ট্রলিতে করে নিতে হয় বড় নদীর পাড়ে। সেখান থেকে নৌকায় চলে আসে হাইকেট পার্ক এলাকয়। এরপর আবারও সেই মালামাল নিছে ছুটতে হয় শহেরর আড়ৎ পর্যন্ত। এইসময় একটি ২ মনের বেগুনের বস্তা প্রতি খরচ পড়ে যায় গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাক্ াউৎপাদিত পণের পরিবহন খরচ বেশি হবার করণে তেমন লাভোবানও হতে পারেন না তারা।
তিনি বেলন, এখানে যদি সারা বছর পানির ব্যবস।তা করা যেতে হবে নৌকা আমারে জমির কাচে চলে যেতে। আমার কম খরচেই আমাদরে মালামাল রাজশাহী শহরে নিয়ে যেতে পারতাম।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, চরের এই সমস্যা বহু বছর ধরেই চলে আসছে। এটির সমস্য সমাধানে চলে রাবার ড্রাম স্থাপনও ড্রেজিং করতে হবে। আমার এগুলো বিষয়ে পানি উন্নয় বোর্ডকে জানিয়েছি। এটি হলে চার বাসির দুঃখ কমে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী সার্কেলর তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, চরবাসীর যাতায়াতের ভোগান্তির কথা ভেবে পদ্মার মাঝখানের চরটি ড্রেজিং করে সেই বালু দিয়ে রাজশাহী শহর সংলগ্ন পদ্মাপাড় ভরাট করে রিভারসিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনার কার হয়েছে। এগুলো অনুমোদন হলেই এসব কাজ শুরু হবে। তখ সারাবছরই নদীতে পানি থাকবে। যাতায়াতেরও সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, চরটি ড্রেজিং হলে একদিকে যেমন চরের মানুষের যাতায়াতের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে, অন্যদিকে রিভারসিটি বাস্তবায়িত হলে রাজশাহীতে পদ্মাকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন পর্যটন এলাকা। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে।