ঢাকা রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৬ আশ্বিন ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পলিনেট হাউজে সবজি চাষ, কৃষি কাজে বাড়ছে ব্যাপক আগ্রহ 

পলিনেট হাউজে সবজি চাষ, কৃষি কাজে বাড়ছে ব্যাপক আগ্রহ 

পলিনেট হাউজ (গ্রীণহাউস) প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাত, তাপ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে শাকসবজি ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন করার এক আধুনিক পদ্ধতি। আর এই আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে কলমে টমেটো চাষ করে এলাকায় সারা ফেলেছ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মালোশিয়া ফেরত কৃষক মাসুদ রানা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ভিতরে প্রত্যন্ত গ্রামে ৪০ শতক জমিতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে তৈরি করেছেন এক নান্দনিক পলিনেট হাউজ।

সেখানে বন বেগুন (ডোল বেগুন) গাছে কলমে টমেটো চাষ করে মাসুদ রানা উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। শীত, বর্ষা এবং গরমে তিন সিজনেই ইচ্ছামত সবজি চাষ করতে পারছেন ওই কৃষক। এই মৌসুমে স্থানীয় বাজারে পছন্দের টাটকা সবজি পেয়ে খুশি হচ্ছেন ক্রেতারা। কৃষক মাসুদ রানার অসময়ের টমেটো উৎপাদন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষি চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বাড়ছে।

সরজমিনে গেলে কৃষক মাসুদ রানা জানান, ৪০ শতক (৪ কাটা) জমিতে দু'মাস আগে ২৫'শ কলমের টমেটো চারা রোপণ করেন। চারা গুলো এক সপ্তাহ পরপর ধাপে ধাপে রোপণ করেন। প্রথমে ৬০০ চারা রোপণ করেন। পরে ধাপে ধাপে এক সপ্তাহ পরপর বাকি চারা গুলো রোপণ করেন। ওই ৬০০ গাছ থেকে প্রতি একদিন পরপর ৩০ থেকে ৪০ কেজি টমেটো তুলতে পারছেন। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। অন্যান্য টমেটো গাছ গুলোতেও ফলন ধরতেছে।

তিনি জানান প্রতিটি টমেটো গাছে ৪-৫ কেজি টমেটো পাওয়া যাবে। এতে করে তার ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা বিক্রি আসবে বলে আশা করছেন। টমেটো চাষে এপর্যন্ত তার প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই পদ্ধতিতে টমেটো গাছে তিনবার জোয়ার আসে। ৭-৯ মাস ফলন পাওয়া যাবে। তার এই টমেটো চাষের পদ্ধতি দেখে কৃষিকাজে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে কৃষক মহলে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে পলি নেট হাউজের মাধ্যমে।

পলিনেট হাউজের বিষয়ে মাসুদ রানা জানান, ৪০ শতক জমিতে লোহার পাইপের খুঁটির উপরে লোহার এঙ্গেল দিয়ে টার্চের ঘরের মত করে চারিদিকে পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয় পলিনেট হাউজ। পলিথিন এর নিচে সূর্যের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়েছে নেট। পলিনেট হাউজের ভেতরের তাপমাত্রা ও কৃত্রিম আবহাওয়ার পরিবেশ গড়ে তুলতে আরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই পলিনেট হাউজ তৈরি করতে তার প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি মালোশিয়ায় ১৪ বছর থাকার পর দেশে এসে এই পদ্ধতিতে কৃষি কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি সবজি এবং কলা চাষ করেছেন। ওইখান থেকেই পরিকল্পনা করেন দেশে এসে সবজি চাষ করবেন। প্রথম অবস্থায় আশেপাশের কৃষকরা তেমন গুরুত্ব না দিলেও বর্তমানে তার এই সফলতা দেখে কৃষকদের মাঝে কৃষিতে ব্যাপক আগৃহ সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিনে কৃষি অফিসের কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ এসে পরিদর্শন করছেন। তার এই সফলতা দেখে সরকারি ভাবে তাকে আরেকটি পলিনেট হাউস করে দিচ্ছেন জানান মাসুদ রানা।

এবিষয়ে নান্দাইল উপজেলা অফিসে গেলে কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মাসুদ রানা একজন উদ্যমী কৃষক। দেশের বাইরে থাকাকালীন সময়ে ব্যক্তি উদ্যোগে তার আধুনিক চাষাবাদের সাথে পরিচিত হয়। দেশে ফিরে ৪০ শতক জমির উপর নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেন নান্দনিক পলিনেট হাউজ। শুরু করেন চারা উৎপাদন সহ বিভিন্ন ধরনের অফসিজন সবজি চাষ। খবর পেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নান্দাইলের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়।

তার আগ্রহ দেখে আধুনিক চাষাবাদের বেশ কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় তাকে ১০ শতক জমির উপর নতুন আরো একটি পলিনেট হাউজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। যেহেতু এ বিষয়ে পূর্ব থেকেই অভিজ্ঞ সেহেতু বিনামূল্যে প্রাপ্ত নতুন এই পলিনেট হাউজের সর্বোত্তম ব্যবহার তিনি করতে পারবেন। অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউজ দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায় তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়।

পলিথিনের আচ্ছাদন থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে পলিনেট হাউজে ফসলের উৎপাদন ২০% বাড়ে পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমন ৭০% কম হয়। প্রথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ কম হয়। আর নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহজ হয়। পলিনেটে সুস্থ্য সবল চারা উৎপাদন করা যায় এবং উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। নান্দাইলে এই প্রথম পলিনেট হাউজ তৈরি হয়েছে। যা দেখে শিক্ষিত বেকার এবং আগ্রহীগণ উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে।

আমরা আশা করছি মাসুদ রানার মাধ্যমে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, রংগিন তরমুজ, রংগিন ফুলকপি/বাধাকপি, লেটুস সহ অন্যান্য অফসিজন সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এরফলে নান্দাইলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্যতা আসবে তেমনি অনেকেই আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে।

গ্রীণহাউস প্রযুক্তি,সবজি চাষ,
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত