মানিকগঞ্জে বক্স-কালভার্ট নির্মাণে অনিয়ম
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:১৭ | অনলাইন সংস্করণ
দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) তত্ত্বাবধানে বক্স-কালভার্ট নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ফসল পরিবহন সহজিকরণের লক্ষ্যে সিংগাইর উপজেলার বলধরা ইউনিয়নের আত্রাইল খালের উপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু-কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০২৩/২৪ অর্থ বছরের এ কাজের জন্য বাজেট ধরা হয় ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আদনান এন্টারপ্রাইজ। ফাউন্ডেশন লেভেলের নূন্যতম পাঁচ ফুট গভীর থেকে ভিত্তি তৈরি করে বক্স-কালভার্ট নির্মাণের বিষয়টি নকশায় স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু করেছে মাত্র একফুট গভীর থেকে। সেটাও আবার তলা অথবা বেড লেভেলের উপর মাটি ফেলে উচু করার পর। এছাড়া পাথরের গ্রেডিং কোডও অমান্য করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পিআইও পরস্পর যোগসাজস অনুমোদিত ডিজাইন অমান্য করে নিজের ইচ্ছামত বক্স-কালভার্টটি নির্মাণ করছেন।
সরেজমিনে বলধারা ইউনিয়নের আত্রাইল এলাকায় দেখা যায়, চারিগ্রাম-গোলাইডাঙ্গা সড়কের সাথেই খালের উপর একটি বক্স-কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তার উপরে থাকা ছোট-বড় এবং মরা পাথর দিয়ে ঢালাই চলছে। খালের তলার উপর মাটি ফেলে কিছু অংশ উচু করা হয়েছে। দুইপাশে নীচু থাকলেও সেই মাটি ফেলা উচু জায়গায় মাত্র এক ফুট নীচ থেকেই ভিত্তি শুরু করা হয়েছে। বক্স-কালভার্টের ভিত্তি যা দাঁড়িয়েছে সেখানে কোথাও চিকন আবার কোথাও মোটা। সেদিকে তাকালে স্পষ্ট ফুটে উঠছে পাথর গ্রেডিং এর নানান দূর্বল দৃশ্য। সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার দায়িত্বশীল কেউ উপস্থিত না থাকলেও চলছে ঢালাই কাজ।
স্থানীয় আমির হোসেন, মনোয়ার, লিটনসহ একাধিক লোক জানান, খালের দুইপাশ নিচু করে শুধুমাত্র ব্রিজের জায়গায় মাটি ফেলে কিছু অংশ উঁচু করা হয়েছে। বেড লেভেলের নীচে কোন গাঁথুনি দেওয়া হয়নি। এভাবে এই বক্স-কালভার্ট নির্মাণ হলে সামান্য বৃষ্টির পানি অথবা বন্যার স্রোতে নীচের মাটি সরে যাবে। ভিত্তি মজবুত না হলে সে কালভার্ট টেকসই হবে না। নীচে গাঁথুনি না দেওয়ায় এর আগে আমরা বাঁধা দিয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অনুমোদিত নকশা বা ডিজাইনের বাইরে কাজ করার কোন সুযোগ নেই।
বক্স-কালভার্ট নির্মাণের হেড মিস্ত্রি জানান, একফুট গাঁথুনি দিয়ে কাজ শুরু করেছি। নিচে গাঁথুনি ছাড়া আমাদের এলাকাতেও এরকম একটি কালভার্ট তৈরি করা হয়েছিল। আমরা একমাসও সেটা ব্যবহার করতে পারিনি। আমাদেরকে যেভাবে কাজের কথা বলা হয়েছে সেভাবেই কাজ করছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদনান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো.বাবুল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি পিআইও অফিসের কাজ করি। তারা যেভাবে বলছে সেভাবেই কাজ করছি।
সিংগাইর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, আহাদি হোসেন বলেন, সব জায়গার মাটি একরকম না। ওখানে মাটি শক্ত থাকায় এক দেড় ফুট নীচ থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, কারিগরি বিষয়টি আমার জানা নেই। ৫ ফুটের স্থানে যদি এক ফুট নীচ থেকে ভিত্তি তৈরি করা হয় তাহলে এটা অবশ্যই কারিগরি ত্রুটি। এখন পর্যন্ত কাজের কোন বিল দেওয়া হয়নি। কোন ত্রুটি থাকলে তারা বিল পাবেনা। শতভাগ কাজ বুঝে নেওয়ার পরই তাদেরকে সমাপ্তির প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, আমি জেলা কর্মকর্তা হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে আমাকে রাখা হয়নি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।