স্বল্প খরচে চিয়া সীড চাষে সফল তরুণ উদ্যোক্তা শিমুল
প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:০২ | অনলাইন সংস্করণ
মো. মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর)

নামমাত্র শ্রমে ও অল্প খরচে উচ্চমূল্যের চিয়া সীড চাষ করে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল মিয়া। তিনি শেরপুরের কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী উত্তরপাড়া এলাকার মোজাফফর আলীর ছেলে। ৫০ শতাংশ বর্গা জমিতে মাত্র ৫ হাজার টাকা খরচ করে চিয়া সীড চাষ করে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখছেন কৃষি উদ্যোক্তা শিমুল। প্রথমবারেরমতো চিয়া সীড চাষ করে জেলাব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।
জেলায় এই ফসল প্রথমবারের মতো আবাদ হওয়ায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে তার ক্ষেত দেখতে আসছেন। অল্প খরচে উচ্চ মূল্যের এই ঔষধি ফসল অন্যান্য যেকোনো ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় ও শিমুলের সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত তরুণ চিয়া সীড চাষে আগ্রহী হয়েছেন।
সরেজমিনে চিয়া সীড ক্ষেতে গিয়ে শিমুল মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি চাকরির কাজের ফাঁকে বা অবসর সময়ে ইউটিউবে কৃষি বিষয়ক সংবাদ দেখতে দেখতে কৃষির প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এলাকায় নতুন নতুন ফসল চাষাবাদের প্রতি তার ঝুঁক বেড়ে যায়। তার বিশ্বাস, ঝুঁকি না নিলে সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই সে চাকরি ছেড়ে দো-আঁশ মাটির ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে, সেখানে নামমাত্র শ্রমে ও অল্প খরচে উচ্চ মূল্যের চিয়া সীড চাষ করেন।
শিমুল জানান, গত ডিসেম্বর মাসে প্রথমবারেরমতো বিদেশি উচ্চ মূল্যের ফসল চিয়া সীডের চাষ শুরু করেন। বর্গা নেয়া ৫০ শতাংশ জমিতে চিয়া সীডের বীজ বপন, সার ও সেচসহ সব মিলিয়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বীজ বপনের পরে ৩ মাসের মধ্যে তার খেতের চিয়া সীড পরিপক্ব হয়। এরই মধ্যে কাটতে শুরু করেছেন তিনি। তার এ জমিতে অন্তত ২০০ কেজি চিয়া সীড উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। গ্রেডিং এর উপর ভিত্তি করে প্রতি কেজি চিয়া সীড ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম চিয়া সীডের বীজ প্রয়োজন হয়। বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। দেশের বিভিন্ন সুপার শপ ও অনলাইনে প্রতি কেজি চিয়া সীডের বাজারমূল্য ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা।
তথ্য মতে, অন্যান্য যেকোনো ফসলের থেকে চিয়া সীড চাষে খরচ কম, তবে লাভ বেশি। এছাড়া এ ফসলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। চিয়া সীডের দাম বেশি থাকা ও অল্প খরচে আবাদ করার সুযোগ থাকায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে চিয়া সীড চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
পুষ্টি বিজ্ঞানের মতে, চিয়া সীড দেখতে অনেকটা তোকমা দানা ও তিল বীজের মতো। ঔষধি এই শস্যে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি, ভিটামিন বি-কপ্লেক্সসহ অনেক পুষ্টিগুণ থাকে। এ ফসল মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া দেহের বাড়তি ওজন এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয় বর্তমানে চিয়া সীডকে সুপার ফুড হিসেবে সবাই জানেন এবং খেয়ে থাকেন।
স্থানীয় কৃষক আজগর আলী জানান, তারা মাঠ ফসল হিসেবে সাধারণত ধান, গম, ভূট্টা জাতীয় ফসল চাষ করেন। তাতে লাভ বেশি হয়না, যতটা লাভ হয় চিয়া সীডে। তাই আগামীতে কিছুটা হলেও চিয়া সীড চাষ করবেন তিনি।
একই এলাকার কৃষানি আলেয়া বেগম জানান, চিয়া সীডে খরচ কম কিন্তু লাভ বেশি তাই অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। এছাড়া শিমুল মিয়ার চিয়া সীডের ফলন দেখে এবং ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় আগামী বছর থেকে এলাকার অনেক কৃষক কৃষানি চিয়া সীডের আবাদ করবেন।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক বলেন, ‘চিয়া সীড একটি পুষ্টিকর খাদ্য। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এটি একদিকে যেমন আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী বলে জেনেছি। তাছাড়া ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় আমরা সবাই আগামীতে অল্প পরিমাণ হলেও এই শস্য আবাদ করবো।
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী জানান, চিয়া সীড বর্তমানে সুপার ফুড হিসেবে পরিচিতি।একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা এই চিয়া সীড আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অনেকে আগ্রহী হয়েছেন। এটি একটি স্বল্প মেয়াদী ফসল। এই ফসল চাষে সেচ অনেক কম লাগে এবং অন্যান্য মাঠ ফসলের তুলনায় খরচ অনেক কম হয়। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় সেচের সুবিধা কম, সেসব এলাকায় চিয়া সীড চাষ করা উত্তম। বর্তমানে এই ফসল চাষ করতে অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। কোন কৃষি উদ্যোক্তা যদি এই ফসল চাষে আগ্রহী হন, তাহলে তাকে পরামর্শ সেবাসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিম মেহেদী।