ভয়াল ২৯ এপ্রিলের কর্মসূচির অংশ হিসেবে কক্সবাজার শহরে কাফনের কাপড় পড়ে অবস্থান কর্মসূচি থেকে গানে গানে টেকসই বেড়িবাঁধ নিমার্ণের দাবি জানিয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দারা। একইসঙ্গে কুতুবদিয়া-মগনামা ঘাটে ফেরি চলাচলের দাবিও জানানো হয়।
এছাড়া একইদিন টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ফেরি চালুর দাবি জানিয়ে কুতুবদিয়ায়, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কুতুবদিয়া টেকসই বেড়িবাঁধ ও ফেরির দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক এহসান আল- কুতুবী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে কুতুবদিয়া সমিতি ও কুতুবদিয়া টেকসই বেড়িবাঁধ ও ফেরি বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের স্মরণে শোক র্যালী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে কুতুবদিয়াবাসীর দুর্ভোগ লাগবে টেকসই বেড়িবাঁধ চেয়ে নিজের লেখা ও সুর করা শাহীন আবরার প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন। এসময় সকলেই এক বাক্যে উচ্চারণ করেন “হোক প্রতিবাদ মুক্তি চাই, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই”।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, কুতুবদিয়া সমিতি কক্সবাজার এর সভাপতি প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন, সদস্য সচিব আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদ উদ্দীন ছোটন, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আক্তার কামাল আজাদ, জেলা যুবদল নেতা দিদারুল ইসলাম রুবেল, এযাবৎ উল্লাহ কুতুবী, কুতুবদিয়া টেকসই বেড়িবাঁধ ও ফেরি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক এহসান আল- কুতুবী।
কুতুবদিয়া টেকসই বেড়িবাঁধ ও ফেরি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক এহসান আল কুতুবী বলেন, আমরা কুতুবদিয়া ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। আমরা কুতুবদিয়ার খেটে খাওয়া, অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষ, লবণচাাষীরা, মৎস্য জীবসহ সর্বস্তরের মানুষ, কুতুবদিয়াতেই থাকতে চাই।
আমরা বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের আবেদন, হয় কুতুবদিয়াকে ভেঙে সাগরের সাথে তছনছ করে মিশিয়ে দেন, নাহয় টেকসই বেড়িবাঁধ দেন। আমাদের সাথে প্রতিবছর বেড়িবাঁধের নামে নাটক আর করবেন না। আমরা এই নাটক আর দেখতে চাই না। বারবার বরাদ্দ এবং সেখান থেকে তথাকথিত নেতাদের লুটপাট আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
কুতুবদিয়া সমিতির সভাপতি প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের তিনটি দাবি রয়েছে। দাবিগুলো হলো, কুতুবদিয়ার চারিদিকে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, কুতুদিয়া থেকে মগনামা পারাপারের জন্য ফেরি চালু এবং শহরের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের স্থায়ী পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধের জন্য জরুরি উদ্যোগ নিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানান। অন্যথায় কক্সবাজার-চট্ট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
এর আগে, ১৯৯১ 'র ভয়াল ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে শহিদদের স্মরণে ও স্থায়ী বেড়িবাঁধের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে কুতুবদিয়ায়। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে উত্তর ধূরুং কাইছার পাড়া সংলগ্ন সাগর পাড়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম সিকদারের নেতৃত্বে কুতুবদিয়ায় টেকসই বেডিবাঁধ নির্মাণের দাবিতে বিশাল এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
নাজের কবির ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শত শত নারী পুরুষ জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের উপর দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও তারা টেকসই বেড়িবাঁধ পায়নি কুতুবদিয়া বাসী৷ যার কারণে দ্বীপটি ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। তাই তারা ত্রাণ নয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জোরালো দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওই দিন আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়া জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে ৯১'র ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা শেষে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৬ হাজারের অধিক অসহায়, হত-দরিদ্র মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়।