ঢাকা শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে দুদকের নজরে ঠিকাদার যুবলীগ নেতা আসাদ

কক্সবাজারে দুদকের নজরে ঠিকাদার যুবলীগ নেতা আসাদ

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের নজরে পড়েছে কক্সবাজারের আলোচিত ঠিকাদার যুবলীগ নেতা আসাদ উল্লাহ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি কাজ বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগিতায় ঠিকাদারি কাজে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন আসাদ উল্লাহ। যা দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রামু উপজেলা কার্যালয়ে অভিযানে যান দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। সেখান থেকে সরাসরি উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়ার বাজার সড়ক নির্মাণ কাজের অংশে যায় দুদক। সেখানে সড়ক নির্মাণ কাজের নানা অসংগতি দেখতে পায় দুদক। এই নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী এবং পুরোনো ইটের খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ পান দুদকের কর্মকর্তারা। সেখান থেকে নমুনাও সংগ্রহ করেছে দুদক।

একই সঙ্গে ৭ বছরের মাথায় নির্মিত ব্রিজের পাইলিং ঝরে গিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা তাও পরিদর্শন করেছে দুদক। এ ব্যাপারে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক।

নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে গর্জনিয়ার বাজার পর্যন্ত দুই দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়কটি ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ। তবে প্রতিষ্ঠানটির কাউকে পাওয়া যায়নি অভিযানে।

সূত্র মতে, এই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বরে। এক বছর সময়সীমার এ কাজের মেয়াদ পার হয়েছে ৬ মাস। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে শুধুমাত্র ১২ শতাংশ। আবার যে কাজগুলো করা হয়েছে তাতেও অনিয়ম রয়েছে দাবি স্থানীয়দের। এদিকে দুদকের টিম বিকেলে যান রামু উপজেলার পূর্ব রাজারকুলে নির্মিত ব্রিজে। সেখানে ব্রিজ নির্মাণ কাজে কোনো অসংগতি রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখেন।

এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার আসাদ উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের সূত্র ধরে দুদক কাজের স্থল পরিদর্শন করেন। কাজের গুণগত মান নিয়ে দুদক বুধবার (৩০ এপ্রিল) আমাকে তলব করেছিল। আমি জবাব দিয়েছি। বাকিটা দুদক দেখবেন।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, 'এই কাজ দেখতে ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে পৃথক টিম এসেছিল। তারাও ল্যাব পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত ইট নিয়ে গেছে। বর্তমানে কাজ বন্ধ রেখেছি।'

ল্যাব পরীক্ষার পর কাজ শুরু করা হবে বলে জানান ঠিকাদার আসাদ।

রামুর বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া জানান, আতিক্কা বিবির ব্রিজটি নির্মাণ করার সময়ই নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রিজের পিলারের ঢালাই খসে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। পরবর্তীতে সংবাদ হলে সংস্কার করা হয়। সংস্কার কাজেও নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের অভিযোগ আছে। তিনি মনে করেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি নির্মাণ ও সংস্কারে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। না হয় ভবিষ্যতেও দুর্নীতি করার প্রবণতা থামবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল হাকিম জানান, 'নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া বাজার সড়কটিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ইতঃপূর্বেও কয়েকবার ঠিকাদারকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি। গতকাল দুদক পরিদর্শনে এসেছিল—আমরা আশাবাদী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'

বুধবার সকাল থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামু কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কপিল উদ্দিন কবীরের মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

দুদকের অভিযানে অংশ নেয়া গণপূর্ত অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কাজটি চলমান। মাত্র ১২% কাজ শেষ হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান চালায়। সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত খোয়া (ইট) আনা হয়েছে। খোয়াগুলো ল্যাবে পরীক্ষার পর অনিয়মের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে। এরপর দুদক ব্যবস্থা নিবে।

দুদকের সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া বাবু জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া বাজার সড়ক নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন স্পট পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্মিতব্য সড়কের ইটের খোয়া সংগ্রহ করেছি যা ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে। পরবর্তীতে ল্যাবের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও জানান, রামু উপজেলার রাজারকুলের আতিক্কা বিবি সেতুর নির্মাণকাজ ঘিরেই উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। সেতুর তিনটি পিলারের পাইলিং এর ঢালাই খসে পড়ে রড বেরিয়ে এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু নদীতে জোয়ার থাকায় সেতুর নিচের অংশ দেখা সম্ভব হয়নি। তবে সেতুর উপরের অংশে কোনো ত্রুটি দেখতে পাইনি।

অন্য একটি সূত্র বলছে, গেল স্বৈরাচার আমলে যুবলীগ নেতা আসাদ উল্লাহ যেইসব প্রকল্পের কাজ করেছেন সকল কাজের নথি দুদক সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিয়েছেন। সচেতন মহলের মতে, আসাদ উল্লাহর পূর্বের কাজের নথি নিয়ে অনুসন্ধান করলে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের সত্যতা মিলবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদার যুবলীগ নেতা আসাদ উল্লাহর কাজ চলমান রয়েছে। তার সব কাজেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ সড়ক ও ব্রিজের কাজ অর্ধেক করে ফেলে রেখেছেন আসাদ। উখিয়া উপজেলার হাজিরপাড়া-দোছড়ি সড়কটি কয়েক বছর ধরে ছিল বেহাল অবস্থা। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির পর সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বস্তি বেশিদিন টেকেনি। ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আসাদ এন্টারপ্রাইজ। ফলে মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হওয়া সড়কটি আবারও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বন্ধ রয়েছে সড়কের কাজ। দুর্ভোগের শেষ নেই সাধারণ মানুষের।

দুদক,ঠিকাদার,যুবলীগ নেতা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত