ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

লালমনিরহাটে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মানবেতর জীবন

জরুরি রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও বেতন-ভাতার দাবি
লালমনিরহাটে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মানবেতর জীবন

মুসলিম সমাজে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আত্মমর্যাদা ও ধর্মপ্রেম থেকেই তারা মসজিদ পরিচালনায় নিজেদের নিয়োজিত করেন। অথচ, লালমনিরহাট জেলায় মসজিদগুলোতে এই তিন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যোগ্য লোক নিয়োগে আগ্রহ থাকলেও তাদের ন্যায্য চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণে দেখা যায় চরম উদাসীনতা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শহর থেকে গ্রাম—সর্বত্রই তারা মসজিদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছেন। কিন্তু এর বিনিময়ে যে সম্মানী দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বিশেষ করে গ্রামের অধিকাংশ মসজিদের দায়িত্ব পালনে জন্য যারা নিযুক্ত থাকেন তারা নামমাত্র সম্মানীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারিভাবে বেতন-ভাতার দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শহর গুলোতে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা তুলনামূলক ভাবে ভালো সম্মানী পেলেও তা অনেক সময় নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয় না। অন্যদিকে, গ্রামীণ মসজিদগুলোতে তাদের সম্মানী অত্যন্ত সামান্য, যা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন।

আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের হাজীপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন জসিম উদ্দিন (৪৮) জানান, তিনি গত কয়েক বছর ধরে এই মসজিদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি মাসে যে সামান্য সম্মানী পান তা দিয়ে বর্তমান বাজারে সংসার চালানো কঠিন। তাই তিনি সরকার ঘোষিত বেতন ভাতা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।

একই মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. শাহিনুর রহমান জানান, পবিত্র ঈদুল আযহার আগে দ্রুত সরকারিভাবে বেতন ভাতার সুরাহা হলে আমাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হত। তাই তিনি সরকারকে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।

একই উপজেলার হাসপাতাল মসজিদের খতিব কারী মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন (৫৬) জানান, তিনি মাসিক সম্মানী পান ৪ হাজার টাকা, সঙ্গে পালন করেন পেশ ইমামের দায়িত্বও। তিনি দুঃখ করে বলেন, এ অর্থ দিয়ে জীবন চালানো দুঃসাধ্য। আমাদের কথা কেউ ভাবেন না।

হাজীপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ নূরুন্নবী জানান, প্রাক্তন সভাপতি মরহুম আলহাজ্ব আজিজার রহমানের রেখে যাওয়া অর্থ দিয়ে চলছে এ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন ভাতাসহ যাবতীয় খরচ। তবে সে অর্থ প্রায় শেষের দিকে তাই তিনি সহ মুসল্লী ও মসজিদ সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত। ভবিষ্যতে এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি চালানো আমাদের জন্য কষ্টকর হবে। তাই তিনি সরকার ঘোষিত বেতন ভাতা দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানী নির্ধারণ করা হলে হাজারো পরিবারে স্বস্তি ফিরবে এবং তারা আরও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন লালমনিরহাটের উপপরিচালক রেজাউল করিম জানান, "জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৩২৯টি মসজিদ রয়েছে এবং নতুনভাবে গণনার কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমান বাজারে অল্প সম্মানীতে টিকে থাকা অনেক কঠিন। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে জানানো হয়েছে। তাদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে কাজ চলছে।"

এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, "জেলার যেসব মডেল মসজিদ রয়েছে, সেগুলোতে সরকারিভাবেই বেতন-ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন মসজিদগুলোর যাবতীয় সিদ্ধান্ত মসজিদ কমিটি নিয়ে থাকে। তবুও যারা উল্লেখযোগ্য বেতন-ভাতা পান না, সেসব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা যদি আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করেন, তাহলে বিষয়টি আমরা বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকি।"

ইমাম-মুয়াজ্জিন,মানবেতর জীবন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত