অতি ভারী বর্ষণেও জলাবদ্ধতা মুক্ত চট্টগ্রাম নগরী

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫, ১৭:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

ফাইল ছবি

প্রতি বছরই বর্ষাকাল এলেই খবরের হেডলাইনে আসে পানির নিচে চট্টগ্রাম। কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে অতি ভারি বৃষ্টি ঝরলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। যদিও বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত থেকে নগরীতে টানা ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চলে রাতভর, শুক্রবারও বৃষ্টি ধারা অব্যাহত আছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত একদিনে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। তবে বর্ষায় সচরাচর যেসব স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, সেসব জায়গায় শুক্রবার জলাবদ্ধতার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, হালিশহরের বিভিন্ন এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা জলাবদ্ধতা প্রবণ। প্রতি বর্ষায় ভারি বৃষ্টি হলে এসব এলাকা এক থেকে একাধিকবার তলিয়ে যায়। কিন্তু  সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব এলাকা জলাবদ্ধতামুক্ত ছিল।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভুঁইয়া  জানান, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার এবং শনিবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতিভারি বৃষ্টিপাত।

আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

শুক্রবার বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে বহদ্দারহাট এলাকায় পানি জমে থাকলেও আজ সকালে বহদ্দারহাট মোড়ে পানি দেখিনি। এখানে নালার ওপর একটা মার্কেট ছিল। সেটা কয়েক মাস আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। খালও মোটামুটি পরিষ্কার ছিল। হয়ত সেই কারণে এখনো পানি ওঠেনি।

আরেক জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকা চকবাজারের বাসিন্দা সায়েম চৌধুরী বলেন, প্রতিবার চকবাজারের যেসব এলাকায় পানি ওঠে আজ এখনো সেখানে পানি দেখা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) চলতি বছরের শুরু থেকে খাল-নালা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। তবে এ খাতে বরাদ্দ স্বল্পতা এবং খাল পরিষ্কারের যন্ত্রপাতি কিনতে প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

নগরীতে চিরাচরিত জলাবদ্ধতার দেখা না মেলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী  জানান, পানি প্রবাহের পথগুলো পরিষ্কার থাকায় পানি জমতে পারছে না। এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলোতে পানি ওঠার কোনো খবর পাইনি। পরিস্থিতি ভালো আছে।

তবে এতে এখনই পুরোপুরি ‘খুশি’ হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি মন্তব্য করে কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, চট্টগ্রামে নগরীতে জোয়ারের পানির চাপ আছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। আগ্রাবাদ এলাকায় বক্স কালভার্টটি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বহু বছর পর। সেটার কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের কিছু পানি হয়ত সহজে নেমে যেতে পারবে। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

এবারের বর্ষাকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতিপূর্বে একাধিক উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফর করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সবশেষ প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সফরের সময় সার্কিট হাউজে সভা করে এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেন। বন্দর নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সবচেয়ে বড় ৮৬২৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ৩৬টি খাল নিয়ে চলমান এই প্রকল্পের ভৌত কাজ পরিচালনা করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।