চুয়াডাঙ্গায় চায়না দুয়ারী জালের দাপটে বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৯:১৫ | অনলাইন সংস্করণ

চুয়াডাঙ্গা জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন নদী, খাল ও বিলে হাজার হাজার অবৈধ চায়না দুয়ারী জালে ভরে গেছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব নিষিদ্ধ জাল দিয়ে ছোট মাছ ও মাছের ডিম নিধন করছে। ফলে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। জেলাবাসী আশঙ্কা করছে, এতে প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সদর উপজেলার দিয়ডির কুতুবপুর বিল, আলমডাঙ্গার ভাটলি, পাটভাড়ার, ভড়ভড়ে, কাজলকোঠা বিল; দামুড়হুদার তালসার, পেড়ো, সাউতার বিল এবং জীবননগরের এক্তারপুর বাওড়, পদ্মগঙ্গা ও খয়েরহুদা বিলে ছোট-বড় নিষিদ্ধ চায়না ও কারেন্ট জালের ছড়াছড়ি। শুধু বিলে নয়, নদী-নালা ও খালেও এসব জাল পাতানো হচ্ছে। ধরা হচ্ছে ছোট মাছ। মাছের প্রজননের এ মৌসুমে কারেন্ট ও চায়না জাল পাতার কারণে নষ্ট হচ্ছে মাছের ডিম, বন্ধ হচ্ছে প্রজন্ম। এতে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশীয় মাছের উৎপাদন।
নিষিদ্ধ এই চায়না জালকে স্থানীয়ভাবে ম্যাজিক জাল বা ঢলুক জালও বলা হয়। চায়না দুয়ারী নামে পরিচিত হলেও এই জালগুলো বাংলাদেশেই তৈরি। জেলার মুক্ত জলাশয়গুলোতে মাছ ও জলজ প্রাণী ধ্বংসের জন্য এ জালের মাধ্যমে চলছে মাছ ধরার উৎসব। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে এই কর্মকাণ্ড।
কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারীর ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও মানছে না কেউ। পানির মধ্যে জাল রেখে শক্ত লাঠির সাহায্যে বেঁধে রাখা হচ্ছে জালের দুই প্রান্ত। ৫০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা এই জালগুলো মিহি ও পাতলা হওয়ায় পানির নিচে সহজেই তলিয়ে থাকে। এই জাল এত সূক্ষ্ম যে ছোট মাছ তো বটেই, মাছের ডিমও উঠছে জালে। জালগুলোর গঠন এমন যে একবার কোনো জলজ প্রাণী ঢুকে পড়লে আর বের হতে পারে না।
সূত্র জানায়, এক রাতেই জালে যে পরিমাণ মাছ ওঠে তা অন্য কোনো জালে উঠে না। তুলনামূলক কম পরিশ্রম এবং সহজলভ্যতার কারণে এই জালের ব্যবহার বাড়ছে। মাছের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে মাছের ডিম ও অন্যান্য জলজ প্রাণী। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিল-নালায় বাড়ছে পুঁটি, কই, টেংরা, টাকি, বেলে, ফোলই, শিং, গজার ও শোলসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব ধরতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি শ্রেণি।
সন্ধ্যা নামাজের পর জাল পাতার কাজ শুরু হয়, আর সকালে জাল টেনে বিক্রি করা হয় স্থানীয় বাজারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের আবু বকর জানান, ‘যারা মাছ বিক্রি করে, তাদের অধিকাংশেরই দুই থেকে পাঁচটি চায়না দুয়ারী জাল রয়েছে। এগুলো বিলগুলোতে পেতে মাছ ধরে।’
এইভাবে অবৈধ জালের মাধ্যমে মাছ ধরায় দেশীয় মাছের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দেশি মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে অবৈধ কার্যক্রম বেড়েই চলেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীপক পাল বলেন, ‘বর্তমানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চায়না দুয়ারী ও কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে।’
