ঠাকুরগাঁওয়ে বৃষ্টি নেই, স্যালো চালিয়ে আমণ রক্ষা কৃষকদের
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ২০:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বর্ষাকাল চললেও ঠাকুরগাঁও জেলায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। ফলে জমিতে স্বাভাবিকভাবে কাদা তৈরি করা যাচ্ছে না। এতে আমণ চাষে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার কৃষকরা। পাশাপাশি শ্রমিক সংকট ও চড়া মজুরিতে অনেকটাই বেড়ে গেছে উৎপাদন খরচ।
চলমান এ সংকটে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে স্যালো মেশিনের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে জমিতে কাদা তৈরি করে আমণের চারা রোপণ করছেন।
জেলার রানীশংকৈল, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে পুরোদমে।
স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্য, সময়মতো চারা রোপণ না হলে ফলন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই অতিরিক্ত খরচ হলেও স্যালো মেশিন চালিয়ে রোপণে নামতে হচ্ছে।
একজন কৃষক জানান, ‘এক বিঘা জমি তৈরি করতে এখন গড়ে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা খরচ হচ্ছে, যা আগের তুলনায় অনেক বেশি। শ্রমিক মিলছে না, তাই অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মাঠে নেমেছেন।’
তাদের মতে, বৃষ্টির ঘাটতির কারণে স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এতে যেমন উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তেমনি লাভের আশাও কমে গেছে।
এছাড়া কৃষকরা জানান, বাজারে বর্তমানে টিএসপি সার সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলে রোপণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি আমণ মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমণ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন চাল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, “গত বছর জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছিল প্রায় ৩০০ মিলিমিটার। এ বছর এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ২০০ মিলিমিটার। তারপরও কৃষকরা থেমে নেই, কারণ আমণের সফলতার ওপরই পরবর্তী ফসল নির্ভর করে।”
তিনি আরও জানান, টিএসপি সারে কিছুটা সংকট থাকলেও এর বিকল্প হিসেবে ডিএপি সার রয়েছে। কৃষকদের সরকারি অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকেই সার সংগ্রহ করতে হবে। কেউ নিয়মের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত দাম নিলে তার ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ কৃষক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। তারা সাধারণত খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে বাকিতে সার নেন। এখানেই মূল সংকট দেখা দিচ্ছে।
সরকারিভাবে বরেন্দ বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ১,৪৩৯টি সেচ পাম্প চালু রয়েছে। অনেক কৃষক আগেই সেচ কার্ডে রিচার্জ করে প্রস্তুতি নিয়েছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৯৬ হাজার ৭৪৪ হেক্টর জমিতে আমণের চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭১ শতাংশ।
