লালমনিরহাটে গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দ বণ্টনে অনিয়ম, ভূমিহীনদের হতাশা
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৪:২৫ | অনলাইন সংস্করণ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পুরান ভেলাবাড়ীতে ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৪৬টি ঘরবিশিষ্ট একটি গুচ্ছগ্রাম। তবে এই ঘরগুলো প্রকৃত ভূমিহীনদের না দিয়ে বিত্তবানদের বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বরাদ্দে এ অনিয়ম ঘিরে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটাই প্রশ্ন, তাহলে ঘর পেল কারা?
অসহায়, স্বয়ংসম্পূর্ণহীন শামসুল মিয়া, সাহেরা বেগম, আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসেন অভিযোগ করে জানান, তারা অন্যের জমিতে থাকেন, দিন দুয়েক পরপর একমুঠো ভাত জোটে, অথচ ঘর পাননি।
তারা বলেন, যাদের জমি, দোকান ও স্থায়ী আয়ের উৎস আছে, তারাই বরাদ্দ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা ঘর বরাদ্দের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
তবে এ অভিযোগ শুধু কিছু মানুষের নয়, এলাকাবাসী ও বঞ্চিত অনেকের ভাষ্যমতে, প্রকৃত ভূমিহীনদের বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা ঘর পেয়েছেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের দুই এলাকায়—পুরান ভেলাবাড়ী ও পূর্বভেলাবাড়ী কামারপাড়া—পুরনো ব্যারাক ভেঙে ৫২টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে পুরান ভেলাবাড়ীতে ৪৬টি এবং পূর্বভেলাবাড়ী কামারপাড়ায় ছয়টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যারাকে পূর্বে বসবাসকারী এবং প্রকৃত ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর দেওয়ার কথা। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বরাদ্দের তালিকায় এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের পৈতৃক সম্পত্তি, বাজারে দোকান এমনকি কেউ কেউ প্রবাসে থাকেন।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্বভেলাবাড়ীর সাতজন প্রকৃত ভূমিহীন ব্যক্তি গত ১০ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। তাদের দাবি, তাদের বারবার আবেদন করেও ঘর দেওয়া হয়নি।
২৬ বছর ধরে ব্যারাকে বসবাসকারী ষাটোর্ধ্ব প্রতিবন্ধী শেফালী বেগম জানান, তার স্বামী ১৭ বছর আগে মারা গেছেন। তাকে না জানিয়ে তার পুরনো ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক বিত্তবানকে। হতাশ কণ্ঠে তিনি বলেন, “কোথায় যাব আমি?”
অন্যদিকে, বরাদ্দ পাওয়া বিত্তবানদের মধ্যে আজাহার আলীর ছেলে শাহ আলম বলেন, তার বাবা একসময় ভূমিহীন ছিলেন। এখন তারা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করেন এবং নিজস্ব জমিতে বাড়িও তৈরি করেছেন। তবে ব্যারাকে থাকায় ঘর পেয়েছেন। একইভাবে ফজর আলীর ছেলে মমিনুর জানান, তার জমি ও দোকান থাকলেও ব্যারাকে বসবাস করতেন বলেই বরাদ্দ পেয়েছেন বলে মনে করেন।
তৎকালীন সমবায় কর্মকর্তা ফজলে এলাহি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রকল্পের ঘর নির্মাণ, তালিকা প্রস্তুতসহ সব কিছু ইউএনও, সহকারী কমিশনার ও তহসিলদার করেছেন। তিনি কেবল মনিটরিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
বর্তমান ইউএনও বিধান কান্তি রায় বলেন, তালিকা আগের ইউএনওর সময় তৈরি হয়েছে। অভিযোগ ওঠায় যাদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের ডেকে যাচাই-বাছাই করা হবে। বরাদ্দে অনিয়ম থাকলে এবং কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখযোগ্য যে, পুরান ভেলাবাড়ীর গুচ্ছগ্রামের ৪৬টি ঘরের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, বাকি ৫টি ঘরের বরাদ্দ এখনো বাকি রয়েছে।
