তালায় বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

যশোরের কেশবপুর উপজেলার আলাদিপুর এলাকার উজান থেকে আসা পানি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে প্রবেশ করে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। এতে শিরাশুনি গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভুগছেন বিশুদ্ধ পানির সংকটে, বাড়ছে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দারা মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

শিরাশুনি গ্রামের মজিবার রহমান, ময়না বেগম ও গুলশানা আরা খাতুন বলেন, উজানের পানি আর বৃষ্টিতে হঠাৎ করেই ডুবে গিয়েছে গ্রাম। রান্না করা, চলাফেরা, বাচ্চাদের লেখাপড়া সবই থেমে গেছে। গত তিন বছর ধরে এই দুর্ভোগ চলছে। কেউ শুনে যায়, দেখে যায়, কিন্তু কোনো সমাধান আসে না।

তারা আরও বলেন, বাড়িতে কোমর পানি। কেউ মারা গেলে দাফনের ব্যবস্থাও কঠিন হবে। বিশুদ্ধ পানি নেই, অনেকেই চুলকানি আর পানিবাহিত রোগে ভুগছে।

জলাবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কেশবপুরের নরনিয়া খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ার বিষয়টি।

স্থানীয় তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে পানি না সরলে জলাবদ্ধতা আরও বাড়বে। নরনিয়া খাল ও ভদ্রা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ভদ্রা নদী খনন না করলে স্থায়ী সমাধান মিলবে না।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু খাল খনন বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রাণী সরকার বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার এলাকা পরিদর্শন করেছি, আজও শিরাশুনিতে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। দ্রুত পানি অপসারণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, সবার সমন্বয়ে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বর্ষায় এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষ বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।