বিপদের মুখে কক্সবাজারের বন্যহাতি
১০ বছরে বন্যহাতির আক্রমণে নিহত ৬২, লোকালয়ে এসে ৩৩ হাতির মৃত্যু
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৩৩ | অনলাইন সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার অফিস

বনভূমি ধ্বংস, প্রাকৃতিক করিডোর হারানো আর খাবারের অভাব— এই তিন বিপদের মুখে কক্সবাজারের বন্যহাতি। রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন ও রেললাইন নির্মাণে বন্ধ হয়ে গেছে হাতি চলাচলের বহু পথ। ফলে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে হাতি। এতে নষ্ট হচ্ছে ফসল, ভাঙছে ঘরবাড়ি, প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। মারা যাচ্ছে হাতিও।
এক তথ্য সূত্র বলছে, কক্সবাজার বনবিভাগে গত ১০ বছরে কক্সবাজারে বন্যহাতির আক্রমণে মারা গেছেন ৬২ জন। আর লোকালয়ে ঢুকে বিদ্যুৎস্পৃষ্টসহ নানা কারণে প্রাণ হারিয়েছে ৩৩টি হাতি।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা— করিডোর পুনরুদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে বন্যহাতি একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে কক্সবাজারে মাত্র দুই শতাধিক হাতি আছে, যেখানে এক দশক আগে ছিল ৩০০-এর বেশি। বনভূমিতে খাবারের ব্যবস্থা ও হাতি-মানুষের সংঘর্ষ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও হাতির নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা জরুরি।”
তিনি আরো জানান, দক্ষিণ বনবিভাগেই তিন করিডোর আছে। তিনটিই স্থাপনার কারণে অচল অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “রোহিঙ্গা শিবির ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কারণে বহু করিডোর বন্ধ হয়ে গেছে। বন ধ্বংস ও খাবারের অভাবে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে, এতে প্রাণহানি ও কৃষির ক্ষতি বাড়ছে। নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত না হলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে কক্সবাজার থেকে বন্যহাতি একেবারেই হারিয়ে যেতে পারে।
চকরিয়ার ডুলাহাজরা এলাকার কৃষক রহিম উল্লাহ বলেন, “প্রায় প্রতি রাতেই হাতি গ্রামে ঢোকে। তারা ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়, ফসল নষ্ট করে। খবর দিলে বন বিভাগের রেসপন্স টিম এসে হাতি তাড়িয়ে দেয়।”
পরিবেশ সাংবাদিক এমআর মাহমুদ বলেন, “করিডোর হারিয়ে হাতি গ্রামে ঢুকে ধানক্ষেত, কলাগাছ ও সবজি ক্ষেত নষ্ট করছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে, অথচ পরিবেশের জন্য হাতির বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি।”
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী সদ্য বিদায়ী রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহরাজ উদ্দিন জানান, “হাতির খাবারের জন্য বাঁশ, ঘাস, কলাগাছ রোপণ করা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় রেসপন্স টিম সর্বদা প্রস্তুত।”
নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম. হেলাল উদ্দিন বলেন, “খাবারের অভাবে হাতি ভারত ও মিয়ানমারে চলে যাচ্ছে। অথচ পরিবেশ রক্ষায় তাদের এখানেই রাখা দরকার- এজন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা জরুরি।”
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, “প্রাকৃতিক ৫টি করিডোর সচল রয়েছে। হাতি-মানুষ সংঘর্ষ নিরসনে কাজ চলছে, সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে এবং হাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে এবং আহতদের সরকার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে ১৬ জনকে ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন রয়েছেন।
