লাগামহীন লুটপাটে পাথরহীন সিলেটের ‘সাদা পাথর’
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
সিলেটে প্রতিনিধি

লাগামহীন লুটপাটে প্রায় পাথরহীন হয়ে পড়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পর্যটন এলাকা সাদাপাথর। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের সাথে ধলাই নদের উৎসমুখ সাদা পাথরে বিপুল পরিমাণ পাথর আসে। প্রকাশ্যেই সেই সব পাথর শত শত নৌকা দিয়ে লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নদী তীরের বালি ও মাটি খুঁড়েও চলেছে লুট। প্রশাসনের সামনেই ব্যাপক এ লুটপাটের কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ এলাকাটি একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দুই সপ্তাহে অন্তত শতকোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল নেমে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যটকরা সাদা পাথরে যাচ্ছেন না। এই সুযোগে হয়েছে লুটপাট। গত এক সপ্তাহে দিন ও রাতে হাজারখানেক বারকি নৌকা ব্যবহার করে পাথর লুট হয়েছে। অনেকটা মব স্টাইলে হওয়ায় ভয়ে পুলিশ প্রশাসনও ছিল সাক্ষী-গোপালের ভূমিকায়।
সিলেটের সাদা পাথর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথরমহালের ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে জমা হয় পাথর। ঢলের তোড়ে সেখানে সর্বশেষ ১৯৯০ সালে একবার পাথর জমা হয়েছিল। সেসব পাথরকে ‘ধলাসোনা’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে পাহাড়ি ঢলের পর লুটপাটে সেসব পাথর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ২৭ বছরের মাথায় ফের পাথর জমা হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পাহারায় সংরক্ষিত হয়। ওই বছর থেকে পুরো এলাকাটি প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। সাদা পাথর এলাকার ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। সেখানকার ঝরনা থেকে সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ভেসে আসা এই পাথর উত্তোলিত বা আমদানি করা পাথরের চেয়ে দামি। এটির কদরও বেশি। ব্যবহৃত হয় স্থাপত্য কাজে।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী জানান, লুট ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাদা পাথর পর্যটন স্পট খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পর্যটন স্পটে এ ধরনের কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটি টিম সেখানে পাঠিয়েছি। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশ, বিজিবির সমন্বয়ে অভিযান চলমান আছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজায়ের মাহমুদ আদনান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া পুলিশের পক্ষে একা কিছু করা সম্ভব নয়। সাদা পাথর লুটের ঘটনার খবর পেলেই ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে স্পেশাল টাস্কফোর্সের টিম অভিযান চালায়। আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করি। এর বাইরে কী আর করার আছে।
