গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ
রাজবাড়ী প্রতিনিধি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার বহুতল মার্কেট নির্মাণের শুরুতেই ড্রইং, ডিজাইন ও পাইলিংসহ পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশ পাওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও মূল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। অথচ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন আইইউজিআইপি (ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্ট) প্রকল্পে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে ৭ তলা ভবন এবং ভীতবিশিষ্ট ৩ তলা মার্কেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৯ কোটি ২৭ হাজার ৪০৪ টাকা।
২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর কার্যাদেশ দেওয়া হয় ফরিদপুরের তাশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জান্নাত কনস্ট্রাকশনকে যৌথভাবে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালন্দ বাজারের নির্ধারিত স্থানে টিনের বেড়ায় ঘেরা জায়গায় মাত্র ২৫ ফুট দীর্ঘ পাইলিং চলছে, যেখানে টেন্ডার সিডিউলে ৫০ ফুট পাইলিংয়ের কথা বলা হয়েছিল। ঠিকাদারের পক্ষে উপ ঠিকাদার হিসাবে নিয়োজিত বিলটেক্স টেকনোলজির প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত তারা ২৫ ফুট দীর্ঘ মোট ২১টি পাইলিং স্থাপন করেছেন। যদিও সিডিউলে ৫০ ফুট দীর্ঘ পাইল স্থাপনের উল্লেখ থাকলেও তারা ২৫ ফুট পাইলিং করেছেন।
প্রকল্প সিডিউলে ৫০ ফুটের ১৪০টি পাইল বসানোর কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ২৫ ফুটের ২৮০টি পাইল বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই পরিবর্তনের লিখিত অনুমোদন বা সিডিউল সংশোধনের প্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ৫০ ফুট পাইলিংয়ের জায়গায় ২৫ ফুট পাইলিং করা হচ্ছে এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে কিছু পাইল মাঝপথেই ভেঙে যাচ্ছে।
গোয়ালন্দ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম খান স্বীকার করেছেন যে, সয়েল টেস্টের সঙ্গে ডিজাইনের পার্থক্য থাকায় পাইলের দৈর্ঘ্য কমানো হয়েছে। তিনি জানান, বাজারের পুরনো দোকানগুলো নিলামের পর অপসারণ করতে সময় লাগায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় এক কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বিল প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে নির্মাণ কাজের বিস্তারিত বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ও জান্নাত কনস্ট্রাকশন এর স্বত্ত্বাধিকারী শহীদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় ঠিকাদার সালাহউদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন কাজটি বাস্তবায়ন করছেন এবং এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
