চুয়াডাঙ্গায় অতিবৃষ্টিতে ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২০:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গা জেলায় টানা অতিবৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার পাঁচটি থানার নিচু এলাকায় সবজি, আউশ ও আমন ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, বেগুন, লাউ, শসা নষ্ট হয়েছে। মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় পেঁপে ও কলাবাগানও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমিতে পানি জমে থাকায় ফুলকপি ও পাতাকপি সহ শীতকালীন সবজির বীজতলাও ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী জেলায় মোট ৮৭২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

সদর উপজেলার সরাববাড়িয়া গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছি না। পেঁপে, লাউ, শসা ও ধনেপাতা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। উঁচু জমিতে কিছু গাছ বেঁচে থাকলেও ফুল ও জালি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।’

একই গ্রামের কৃষক আসাদ বলেন, ‘আমার ৩ বিঘা জমির কাঁচামরিচ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ঝড়ে পেঁপে বাগানের অনেক গাছ উপড়ে পড়েছে। কলাবাগানেও একই অবস্থা।’

সদর উপজেলার ছয়ঘড়ি গ্রামের আব্দুর রউফ মাস্টার বলেন, ‘আমি সাড়ে চার বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলাম। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে শেকড় পচে যাওয়ায় বেশিরভাগ গাছ মাটিতে পড়ে গেছে।’

জীবননগর উপজেলার কৃষক আফজালুর রহমান জানান, ‘৩০ বিঘা জমিতে ৪০ বছর ধরে চাষাবাদ করছি। কিন্তু এবার শীতকালীন ফুলকপি, পাতাকপি ও ধনেপাতার বীজতলা তৈরির সময় নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় চারা তৈরি করতে গেলে খরচ বাড়বে, উৎপাদন কম হবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে হবে কৃষকদের।’

কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, “এখন পর্যন্ত কৃষকদের ক্ষতি কোটি টাকারও বেশি। সামনে আবাদ কম হবে, খরচ বাড়বে— এগুলোও ক্ষতির সঙ্গে যোগ হবে।”

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে— ৪২ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা, ৯৮ হেক্টর জমির আমন আবাদ, ১৩২ হেক্টর জমির আউশ ধান, ১১০ হেক্টর জমির মরিচ, ৩১২ হেক্টর জমির বিভিন্ন সবজি, ৫৭ হেক্টর জমির কলা, ৩৭ হেক্টর জমির পেঁপে, ১৩ হেক্টর জমির চিনাবাদাম, ২০ হেক্টর জমির পেয়ারা, ২১ হেক্টর জমির মাল্টা ও ৩০ হেক্টর জমির ড্রাগন ফল। তবে অফিসের হিসাবে পাট ও পান ক্ষতির তালিকায় শূন্য দেখানো হলেও কৃষকরা জানিয়েছে— এ দুই ফসলেও ক্ষতি হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের পানচাষি রফিক হোসেন বলেন, “বৃষ্টির পানি জমে থাকায় পানগাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। এতে আমি প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি। শুধু আমি নই, গ্রামের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।”

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর জুলাই মাসে প্রায় পাঁচগুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত বছর জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত ছিল ৮৫ মিলিমিটার, আর এ বছর জুলাইয়ে হয়েছে ৪৭০ মিলিমিটার। এছাড়া আগস্টের প্রথম ৮ দিনেই বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমনের জমির পানি সরে গেছে। কৃষকদের নতুন করে চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে নাবি জাতের চারা ব্যবহার করা যেতে পারে। বীজতলা না থাকলেও এখনো পিসতলা করা সম্ভব। অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও করণীয় বিষয়ে কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’