তালের পিঠা গ্রামবাংলার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ২২:০১ | অনলাইন সংস্করণ

  বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে তাল এক অনন্য ফল। ভাদ্র মাস এলেই দেশের নানা প্রান্তের মতো ফরিদপুর জেলাতেও শুরু হয় তালের পিঠা বানানোর উৎসব। বিশেষ করে গ্রামের ঘরে ঘরে পাকা তাল দিয়ে নানারকম পিঠা, বড়া ও পায়েস তৈরি হয়। যদিও শহরেও এর কদর রয়েছে, তবুও গ্রামীণ এলাকায় এই আয়োজন বেশি চোখে পড়ে।

বাংলা সাহিত্যেও তাল নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান ও ছড়া রচিত হয়েছে। ভাদ্র-আশ্বিন মাস যেন তাল ও তালের পিঠার মৌসুম। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন পাকা তালের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়িতে বাড়িতে চলছে পিঠা তৈরির ধুম, আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়নের আয়োজন। খাদ্যরসিক বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করতে তাল রসে তৈরি পিঠা এ সময়ে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

যাদের তালগাছ আছে তারা ভোরে গাছতলায় গিয়ে তাল কুড়িয়ে আনে, আর যাদের নেই তারা বাজার থেকে তাল কিনে আনে। এরপর শুরু হয় তালের আঁশ থেকে রস সংগ্রহের প্রক্রিয়া। গুড়, চিনি, দুধ ও গরম মশলা দিয়ে জ্বাল করে তৈরি হয় সুস্বাদু তাল পিঠা, তাল বড়া, তালের পায়েসসহ আরও নানারকম খাবার।

তালের প্রধান দুটি জাত রয়েছে—মহিষা তাল ও দুধা তাল। মহিষা তাল কালো রঙের ও আকারে বড়, আর দুধা তাল লালচে রঙের ও তুলনামূলক ছোট। এই দুই জাতের তাল দিয়েই বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরি হয়। ধৈর্য ও যত্ন নিয়ে নারীরা তাল থেকে নির্যাস বের করে পিঠা, বড়া, তালরুটি, কলাপাতায় পুড়িয়ে পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন।

একসময় বোয়ালমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রচুর তালগাছ দেখা যেত। ভাদ্র মাস এলেই প্রতিটি ঘরে ঘরে তাল পিঠা বানানোর উৎসব হতো। সারারাত ধরে তৈরি পিঠা ভোরে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়ার আনন্দ ছিল ভিন্ন মাত্রার। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তালগাছ কমে গেছে, সেইসঙ্গে ম্লান হয়েছে ঐতিহ্যও। এখন আর তেমনভাবে চোখে পড়ে না তাল কুড়ানো, পিঠা বানানো ও তা বিলানোর দৃশ্য।

স্থানীয় গৃহবধূ স্মৃতি শীল বলেন, আমার তাল দিয়ে তাল পিঠা ও তাল বড়া বানাতে খুব মজা লাগে। প্রতিবছর ভাদ্র মাসে আমরা সবাই মিলে খাই।

অন্য এক গৃহবধূ নমিতা পোদ্দার বলেন, প্রতিবছর আমাদের বাড়িতে তাল পিঠা ও তাল বড়া তৈরি করি। খেতে দারুণ লাগে। তাই এ মৌসুমে তালের তৈরি পিঠা না হলে যেন অপূর্ণতা থেকে যায়।