কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪২ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার অফিস

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়। দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট একসময় ছিল প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ঘাট দিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাতায়াত করত জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। এখন সবই অতীত।
এ জায়গায় অন্তত ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস ও নদী ভরাট করে নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক স্থাপনা। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা।
বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে আজ সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ সব স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ, কোস্ট গার্ড, সেনাবাহিনী ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় ভূমি অফিস ও বিআইডব্লিউটিএ পৃথক তালিকা তৈরি করেছে। সহস্রাধিক দখলদারের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রভাবশালী ব্যক্তি তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী এবং এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কাশেম।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযানে চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয়েছিল ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। তবে সেখানে ফের দুই শতাধিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত ৪৫ দিনে ফের দখলদাররা নির্মাণকাজ শুরু করে।
ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, খুরুশকুল সেতুর কারণে নদী সংকুচিত হয়ে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন উৎপন্ন ৯৭ টনের বেশি বর্জ্যের মধ্যে প্রায় ৭০ টন নদীতে ফেলা হয়। এতে নদীর বুকজুড়ে ময়লার পাহাড় গড়ে উঠেছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করতে বিশেষ সমন্বয় সভা হয়েছে। নদী দখল করে নির্মিত সব স্থাপনা উচ্ছেদ এবং সীমানা নির্ধারণ করা হবে।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদী সীমানার দখলদারদের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ছয় মাসের মধ্যে নদীটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালত মামলাটিকে চলমান মামলা হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি ছয় মাস পরপর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
