চা বাগান থেকে দিন দিন কমছে ‘ছায়াবৃক্ষ’
চা উৎপাদনে ফেলছে প্রভাব
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:২০ | অনলাইন সংস্করণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ডানকান ব্রাদার্স টি কোম্পানির শমশেরনগর চা বাগান থেকে বিলীন হচ্ছে বৃহদাকৃতির শেড ট্রি বা ছায়াবৃক্ষ। দীর্ঘদিন ধরেই একটি মহল চা বাগানের সেকশন থেকে গাছ কেটে পাচার করছে। এতে চায়ের উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, আবার পরিবেশের জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে। তবে চা বাগান কর্তৃপক্ষের দাবি, পূজাপার্বণে জ্বালানির জন্য শ্রমিকরা মৃত গাছ কেটে নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শমশেরনগর চা বাগান শ্মশানঘাট সংলগ্ন স্থান থেকে দুটি বড় আকাশমণি গাছ কেটে নেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শমশেরনগর-পীরেরবাজার সড়কধারে শ্মশানঘাট সংলগ্ন শমশেরনগর চা বাগানের সেকশন থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে দুটি আকাশমণি গাছ কাটা হয়। চা বাগানের সর্দার আহাদ মিয়া কয়েকজন চা শ্রমিক দিয়ে গাছগুলো কাটান। বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই কাটা গাছগুলো খণ্ড খণ্ড করে চা বাগানের ট্রাক্টরে করে বাগানের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। দুটি গাছই বড় ও জীবিত ছিল। এগুলো চা গাছের ছায়াবৃক্ষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল।
গাছ কাটার বিষয়ে আহাদ মিয়া বলেন, চা বাগানের ব্যবস্থাপকের অনুমতি সাপেক্ষে জ্বালানির জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে। এভাবে আরও কিছু গাছ কাটা হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চা শ্রমিক বলেন, আহাদের মাধ্যমে চা বাগানের শত শত গাছ রাতের আঁধারে কেটে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সেকশনগুলো বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে।
এদিকে শমশেরনগরের ফাঁড়ি দেওছড়া, ডবলছড়া, কানিহাটি চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে পুরোনো ও বৃহদাকৃতির গাছ চুরি হচ্ছে। সেকশনের পুরোনো কড়ই, আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এই গাছগুলো চা গাছের ছায়া দেয়। পাশাপাশি অতিবৃষ্টি ও প্রখর রোদের কবল থেকে চা গাছকে রক্ষা করে। এজন্য চায়ের টিলাগুলোতে গাছপালা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
অন্যদিকে বিশাল চা টিলায় এসব গাছ মাটির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। চা বাগানের ছায়াবৃক্ষগুলো চায়ের উৎপাদন, মাটির ক্ষয়রোধ এবং পরিবেশ রক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গাছ কেটে ফেলার ফলে চায়ের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ছে।
পঞ্চায়েত নেতারা জানান, বাগান থেকে গাছগাছালি ও কাঁচা চা পাতা চুরি হচ্ছে। গাছ চুরি হয়ে যাওয়ায় টিলাগুলো বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে চা গাছ ছায়াহীন হয়ে পড়বে। এতে বাগান ও শ্রমিক—দু'পক্ষেরই বড় ধরনের ক্ষতি হবে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে শমশেরনগর চা বাগানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক এম.বি. সাজ্জাদুর হক গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শ্রমিকরা জ্বালানি কাঠের জন্য মৃত গাছ কাটছেন। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, তাই তাদের প্রয়োজন মেটাতে গাছ কাটা হয়েছে। তবে যদি জীবিত ও বড় গাছ কাটা হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে রাজকান্দি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, চা বাগান থেকেও গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
