রংপুরে জ্বালানী তেলের সংকট সরবরাহ শূন্যে আসার আশঙ্কা
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২৪ | অনলাইন সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো

রংপুরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জ্বালানি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা, পদ্মা ও যমুনার ডিপোতে তেলের মজুদ শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে। তেল না থাকায় বিপাকে পড়েছেন ফিলিং স্টেশনের মালিকরা। অনেকে বাঘাবাড়ি ও পার্বতীপুর থেকে তেল এনে ফিলিং স্টেশন চালু রাখার চেষ্টা করছেন। এতে তাদের খরচ বাড়ছে কয়েকগুণ।
চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে তেল সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। আগে রেলপথে মাসে ৮–৯টি র্যাক আসত, প্রতিটি র্যাকে থাকত ২৭টি ওয়াগন। বর্তমানে মাসে এক থেকে দুটি র্যাক আসছে। গত ছয় মাস ধরে এই অবস্থা চললেও রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের রংপুর রেলহেড ডিপোতে সরবরাহ বন্ধ থাকায় রংপুর বিভাগের অন্তত পাঁচ জেলায় তেল সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পাম্প মালিক ও এজেন্টদের চাহিদা মতো তেল সরবরাহ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংগঠনটির রংপুর জেলা শাখার পক্ষ থেকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর আবেদন জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত ১৪ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরও চিঠি পাঠানো হয়, তাতেও কাজ হয়নি।
রংপুর ডিপো থেকে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলায় জ্বালানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে নিয়মিত তেল না আসায় চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একাধিক পাম্প মালিক জানান, বিকল্প হিসেবে পার্বতীপুর ও বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে তেল আনতে হচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ হচ্ছে, পাশাপাশি তেল আনতে সিরিয়াল জটিলতা ও সময় নষ্ট হচ্ছে দুই দিনেরও বেশি।
তথ্য অনুযায়ী, রংপুর অঞ্চলের তিনটি ডিপোতে মাসে অন্তত আড়াই কোটি লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২১ লাখ লিটার, যা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই দিনের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকটের কারণে তেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। কবে নাগাদ তেল আসবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
রংপুর বিভাগীয় দাহ্য পদার্থ বহনকারী ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলাউল মিয়া লাল্লু জানান, তেল না থাকায় প্রায় ছয়শত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। নিয়মিত সরবরাহ চালু না হলে তারা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
সংগঠনটির রংপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. আজিজুর ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে তেল আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পাঁচ জেলায় তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি উত্তরণে দুই-এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
ফিলিং স্টেশনের মালিক মঞ্জুর আজাদ বলেন, ‘রংপুর ডিপোতে তেল নেই। বাধ্য হয়ে বাঘাবাড়ি ও পার্বতীপুর থেকে তেল এনে ফিলিং স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।’
