উচ্ছেদ অভিযানকালে প্রতিরোধের মুখে বিআইডব্লিউটিএসহ প্রশাসন
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার অফিস

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিনে স্থানীয়দের প্রবল প্রতিরোধের মুখে অভিযান স্থগিত করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও প্রশাসন।
শুক্রবার সকাল থেকে নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়ার অংশে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
সকালে বুলডোজার নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা।
তবে তার আগেই শহরের প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কে শত শত স্থানীয় মানুষ নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। চার রাস্তার মোড়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়, টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বিমানবন্দর সড়কে ঠেলাগাড়ি ফেলে অবরোধ গড়ে তোলা হয়।
অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা একাধিকবার আলোচনা করলেও তারা সরতে অস্বীকৃতি জানান। তাদের দাবি, এ উচ্ছেদ অবৈধ, কারণ খতিয়ানভুক্ত জমিতে খাজনা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা বসবাস করছেন। প্রাণ দিলেও উচ্ছেদ মানবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরা আটকা পড়েন। এতে প্রধান সড়ক ও বিমানবন্দর সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান।
অবশেষে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে। পরে বুলডোজার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছু হটলে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে অবরোধকারীরা সরে যান। বেলা ১২টার পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে কক্সবাজারে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এমন কিছু হচ্ছে কি না—তা ভেবে দেখার বিষয়। অনেক পুরোনো বসতি খতিয়ানভুক্ত ও খাজনা প্রদানের কাগজপত্র রয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই না করে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কে রাখা উচিত নয়।’
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত সোমবার শুরু হওয়া এ উচ্ছেদ অভিযানে প্রথম দুই দিন স্বাভাবিক কার্যক্রম চললেও তৃতীয় দিনে বাধার মুখে অভিযান বন্ধ থাকে।
চতুর্থ দিন আংশিক অভিযান চালানো হয়। তবে পঞ্চম দিনে পুরোপুরি বন্ধ থাকে। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা ও প্রতিবন্ধকতার ঘটনায় পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে, যেখানে ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এখানে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। যৌথ তালিকায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালীর নাম রয়েছে।
২০১০ সালের প্রজ্ঞাপনে নদীর তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তরের নির্দেশ থাকলেও জেলা প্রশাসন তা কার্যকর করেনি। এর ফলে দখল চলতে থাকে। ২০২৩ সালে উচ্ছেদে ৩০০ একরের বেশি জমি দখলমুক্ত করা হলেও পরে তা ফের দখল হয়।
গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে আগামী চার মাসের মধ্যে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই নির্দেশনার অংশ হিসেবেই এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
