গণতন্ত্র না ফেরা পর্যন্ত নেতাকর্মীরা জেগে থাকবে: তারেক রহমান
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৩১ | অনলাইন সংস্করণ
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে কোন মূল্যে যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ গণতন্ত্রের যাত্রায় ফিরে না আসবে, গণতন্ত্র রেললাইনে চলা শুরু না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়ার প্রত্যেকটি নেতাকর্মী অতন্দ্রপ্রহরীর মতো জেগে থাকবে এবং গণতন্ত্র পূনঃউদ্ধারের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ সব বলেন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের যে প্রত্যাশিত নির্বাচন আগামী দিনে সেই প্রত্যাশিত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জনগণের রায়ে সরকার গঠনে সক্ষম হবে। আমাদের ৩১ দফার আলোকে বাংলাদেশের জনগণের যে প্রত্যাশিত বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জীবন বাজী রেখে আমরা কাজ করবো।
তিনি বলেন বিগত ১৬ বছরে মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল না, ভোট প্রদানের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ধ্বংস করা হয়েছিল জবাবদিহিতার গণতন্ত্র। এভাবে ধীরে ধীরে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, গত বছরে জনগণ এই দেশকে বাঁচানোর জন্য যখন রাজ পথে নেমে এসেছিল। আমরা দেখেছি শুধু জনগণ না কোমল শিশুরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। শিশুসহ অনেককেই নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিজয় হয়েছে দেশের জনগণের। শুধু ক্ষমতা ছাড়া নয় দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে তাদের, স্বেচ্ছাচারিতার পতন হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, এখন মানুষের যে প্রত্যাশা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের ৩১ দফার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই দেশকে জনগণের হাতে তুলে দিতে হবে।
এদিকে সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রফেসর ড. মো. ইউনুসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। তিনি বলেছেন নির্বাচনের এ সিদ্ধান্ত আল্লাহ ছাড়া কেউ পরিবর্তন করতে পারবেন না। একটি সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হলে দেশের সংস্কার সহজ হবে। মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। আমাদের সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ঠাকুরগাঁও ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। কিন্তু এখন ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ আওয়ামীলীগকে তাড়িয়ে বিএনপির ঘাটিতে পরিণত করেছে। আজকে বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ চাচ্ছেন এই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর সেটা তারেক রহমানের নেতৃত্বের মাধ্যমেই হোক।
অপরদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। অথচ কয়েকজন এখন বলছে তাদের শহীদদের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে বিতাড়িত করেছে। যাদের আমরা ভালো ভেবে দেশের নেতৃত্বের জায়গায় বসিয়েছিলাম তারা বলছে এক স্বৈর শাসককে তাড়িয়েছি, আর কোন স্বৈরাচারী শাসককে আমরা চাই না। তারা এ কথার মাধ্যমে কাদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ সাহস তারা পায় কোথায় ? অথচ ২৪ এর আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরাই।
এর আগে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনসহ বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এরপরে প্রথম অধিবেশন ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ২ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।
দীর্ঘ ৮ বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম শরিফসহ ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেছেন। সবশেষ সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মির্জা ফয়সাল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৫১ টি ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন পয়গাম আলী। অন্যান্য সকল পদে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সকলকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার।
সম্মেলনে জেলার ৫টি উপজেলা এবং ৩টি পৌরসভার ৮০৮ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মী এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উৎসব মুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নূর করিম।
