ময়মনসিংহ বিভাগীয় গুণী শিক্ষক নির্বাচিত নকলার আসমা
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি

শেরপুরের নকলা উপজেলার আসমা খাতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলার পরে এবার বিভাগীয় পর্যায়ে ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গুণী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় হতে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ উদযাপন ও গুণী শিক্ষক নির্বাচন উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন ও গুণী শিক্ষক নির্বাচন কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে নকলার নারায়নখোলা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসমা খাতুনকে প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরিতে বিভাগীয় গুণী শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১০টি বিষয়ে মূল্যায়নের ভিত্তিতে এ মনোনয়ন দেওয়া হয়। এরমধ্যে, শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিগত পারদর্শিতা, শিক্ষকের বিভিন্ন কলাকৌশল, স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও জানাশোনা, পেশাগত দক্ষতা, প্রশ্ন তৈরির দক্ষতা, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর প্রতি পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল তৈরি, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার রোধে নিয়মিত হোম ভিজিট, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা, শিক্ষকের ইনোভেশন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কাজে উদ্ধুদ্ধকরণ, বিদ্যালয়ে উন্নয়নমূলক কাজে সহায়তা করাসহ শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়াবলি যাচাই-বাছাই শেষে শেরপুরের নকলা উপজেলার নারায়নখোলা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আসমা খাতুনকে প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরিতে বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ গুণী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
তথ্য মতে, আসমা খাতুন ২০১১ সাল থেকে উপজেলার নারায়নখোলা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। তিনি উপজেলার কাজাইকাটা গ্রামের মো. আজাহার আলীর ২ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার বড় সন্তান। আসমা খাতুন ১৯৯১ সালে এসএসসি ও ১৯৯৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরে ১৯৯৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি হওয়ায় শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ার ভাবনায় তাদের পিছনেই বেশি সময় ব্যয় করতে হয় তার। তাই পড়ালেখায় আর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে দধিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, পরে কাজাইকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এরপরে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চরবন্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ছিলেন। অতঃপর ২০০৬ সালে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়ে দুধেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ২০১১ সালে তাকে নারায়নখোলা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। এখনো ওই বিদ্যালয়েই তিনি কর্মরত আছেন।
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে আসমা খাতুন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমি সবসময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য। আমি আমার বিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখি। আমার বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিটি সাফল্য আমাকে আনন্দিত করে। তাছাড়া যেকোনো স্বীকৃতি কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা ও দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। আমাকে প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরিতে ময়মনসিংহ বিভাগের শ্রেষ্ঠ গুণী শিক্ষক নির্বাচিত করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি; পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাচ্ছি নির্বাচকমণ্ডলীর সংশ্লিষ্ট সকলকে। এই অর্জন আমার একার নয়; প্রিয় শিক্ষার্থী, সহকর্মী, অভিভাবক ও উপজেলাবাসী সবার। তাই আমার কর্মের এ স্বীকৃতি তথা অর্জন সহকর্মী, প্রিয় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ উপজেলাবাসী জন্য উৎসর্গ করছি। আমি যেন এভাবেই বাকী কর্মময় জীবনে উন্নয়নের স্বাক্ষর রেখে যেতে পারি, সেজন্য সার্বিক পরামর্শসহ সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোজিনা খাতুন বলেন, আসমা খাতুন তার দায়িত্বশীলতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিকতা, অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাসহ বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে শিক্ষক সমাজে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তার এ অর্জনে উপজেলার শিক্ষক সমাজ গর্বিত।’ তার এ সাফল্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম গুণী শিক্ষক আসমা খাতুনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়েও তার সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকুক এই শুভকামনা রইল। তার মতো গুণী শিক্ষকের হাত ধরেই নকলা তথা দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হবে বলে আশা করা যেতে পারে।’
