বালিশ-কাণ্ডে চাকরি গেল প্রকৌশলীর, অন্যজনের কমলো বেতন
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০২ | অনলাইন সংস্করণ
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিকের আবাসন গ্রীণসিটি প্রকল্পে ক্রয় প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান চাকরি থেকে অপসারিত হয়েছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ. কে. এম. জিল্লুর রহমানকে নিম্নপদে অবনমিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুজ্জামান এবং এ. কে. এম. জিল্লুর রহমান (চলতি দায়িত্ব) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল), রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালে নির্মাণাধীন রূপপুর গ্রীণসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও সামগ্রী ক্রয় এবং ভবনে উঠানোর কাজে অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, তারা দরপত্র আহ্বানের আগেই মালামাল গ্রহণসহ নানা অনিয়মে জড়িত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী রফিকুজ্জামানকে দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে চাকরি থেকে অপসারণের গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একইভাবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ. কে. এম. জিল্লুর রহমানকেও অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রাক্কলন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্নপদে অবনমিত করার দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত বিভাগীয় মামলার তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শে এবং রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে এ দণ্ড কার্যকর করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তখন জানা যায়, কেন্দ্রীয় অনুমোদন এড়াতে ১৬৯ কোটি টাকার কাজ ছয়টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়, প্রতিটির মূল্য রাখা হয় ৩০ কোটি টাকার নিচে। সেই সময় প্রতিটি বালিশ কেনা হয় ৫ হাজার ৯৫৭ টাকায় এবং খাটে তুলতে দেখানো হয় ৭৬০ টাকা মজুরি। কভারসহ একটি কমফোর্টারের দাম ধরা হয় ১৬ হাজার ৮০০ টাকা, যেখানে বাজারমূল্য ছিল সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয় ৫ হাজার ৯৩৬ টাকায়, যা বাজারে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
পাঁচটি ২০ তলা ভবনের জন্য এসব কেনাকাটা হয়। মাত্র ৩০টি কমফোর্টারের জন্য ৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দেখানো হয়। প্রতিটি কমফোর্টার খাট পর্যন্ত তুলতে ব্যয় দেখানো হয় ২ হাজার ১৪৭ টাকা এবং সঠিকভাবে তোলা হচ্ছে কি না তা তদারকির জন্য প্রতিটির ক্ষেত্রে আরও ১৪৩ টাকা ধরা হয়।
সব খরচ মিলিয়ে একটি কমফোর্টারের জন্য ব্যয় দেখানো হয় ২২ হাজার ৫৮৭ টাকা। একইভাবে ৩০টি চাদর আনতে ৩০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া এবং প্রতিটি চাদর খাটে তুলতে দেখানো হয় ৯৩১ টাকা মজুরি।
