অর্থকষ্টে যমজ ২ শিশুকে বিক্রির চেষ্টা, ডিসির হস্তক্ষেপ

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ

  দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি

নেত্রকোণার জেলা শহরের নাগড়া আনন্দবাজার এলাকায় এক অতি দরিদ্র পরিবার অর্থকষ্টের কারণে তাদের নবজাতক যমজ সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীরা বিষয়টি শনাক্ত করে জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভায় উপস্থাপন করলে জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপে নবজাতক দুটি রক্ষা পায়।

গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক ও জেলা শিশুকল্যাণ বোর্ডের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বিষয়টি শুনে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পরে সন্ধ্যায় তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রাকিবুজামান, উপ-পরিচালক সমাজসেবা মো. শাহ আলম, প্রবেশন অফিসার তারেক আহমেদ ও শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পরিবারটির বাড়িতে ছুটে যান।

পরিবারটির চরম আর্থিক দুর্দশার কথা শোনার পর জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। পরিবারের চার শিশুর মধ্যে অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা বড় সন্তানকে ‘শিশু পরিবার (বালক), নেত্রকোণা’-তে লালন-পালনের জন্য প্রেরণের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি নবজাতক যমজ শিশুর জন্য দুই টিন শিশুখাদ্য, পরিবারের জন্য দুই বস্তা শুকনো খাবার এবং নগদ পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

জেলা প্রশাসক জানান, নেত্রকোণা শহরের পৌর এলাকার আনন্দবাজার এলাকায় বস্তি সম একটা এলাকায় সরকারি জায়গায় একটি টিনের খুপরি ঘরে এই পরিবারটি বসবাস করে, যার বেশিরভাগ স্থানে পলিথিন দিয়ে ঘেরা। বৃষ্টি এলে সারা ঘরময় পানির বন্যা বয়ে যায়। ছোট একটা চৌকিতে ৬ জন মানুষের গাদাগাদি বসবাস। বাবা কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ, কখনো রিকশা চালান, যখন যে কাজ পান তখন তাই করেন। কাজ না থাকলে কোনো আয় থাকে না।

ঘরে চার সন্তান ও স্ত্রী। বড় দু ছেলে ৬ ও ৪ বছর বয়সি। কিন্তু অপুষ্টি ও ক্ষুধায় ভুগতে ভুগতে ওদের দেখলে মনে হয় ৩ ও ২ বছর বয়সি, এতটাই জীর্ণ, শীর্ণ। পরের দুটো বাচ্চা যমজ (একটা ছেলে, একটা মেয়ে)। মাত্র দুমাস বয়স। কিন্তু এরা মায়ের বুকের দুধ পায় না (মা ও খেতে পান না), তাই কৌটার দুধ কিনে খাওয়াতে হয়। সেটা তো বাবার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন তারা যমজ বাচ্চা দুটিকে বিক্রি করে দেবেন। এই খবর পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকসহ জেলার কর্মকর্তারা এই পরিবারে যান।

জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে পরিবারটি নবজাতক বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই পরিবারটির সার্বিক তত্ত্বাবধান অব্যাহত থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।