পূর্বধলায় টিআর প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:০২ | অনলাইন সংস্করণ
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

নেত্রকোনার পূর্বধলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (টিআর) প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কাগজে-কলমে শতভাগ কাজ সম্পন্ন দেখানো হলেও বাস্তবে অনেক প্রকল্পে ২৫–৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে, কোথাও আবার একেবারেই হয়নি। অথচ পুরো টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর খাতে ৩য় পর্যায়ে ৭০ লাখ ৫৩ হাজার ১০৬ টাকার ৪৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলায় টিআর প্রকল্প নিয়ে চলছে নয়ছয়। উঠে এসেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
সদর ইউনিয়নে দেওয়া ৮ প্রকল্পের বেশিরভাগেই ২৫–৩০ শতাংশ কাজ হয়েছে। কিছু প্রকল্প কেবল কাগজে-কলমেই রয়েছে, বাস্তবে কাজের অস্তিত্ব নেই।
উদাহরণস্বরূপ, রেললাইন থেকে দিগজান পাকা রাস্তার ভাঙতি ভরাট ও মেরামতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। শালদিঘা শান্তি মার্কেট মসজিদের পূর্ব পাশে ইটের দেয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাটের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সামান্য ইটের দেয়াল নির্মাণ হয়েছে। মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, তারা ৫০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদ মেরামত ও ঘরের ছাউনি পরিবর্তনের জন্য ৩ লাখ ৩ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃত কাজের পরিমাণ কম। জগৎমনি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুম সংস্কারে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে মোটামুটি সংস্কার হয়েছে। খারছাইল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ থাকলেও মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার রুমে আইপিএস স্থাপন ও সিকিউরিটি বাল্ব স্থাপনে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। হাসপাতালের কর্মকর্তা আইপিএস ও ব্যাটারি দেখিয়ে জানান, দামি ব্র্যান্ডের সামগ্রী কেনা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল বোর্ড স্থাপনের বরাদ্দ ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানায় এটি অন্য কোথাও ব্যবহার হয়েছে।
সাউতুল কোরআন নুরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার মাঠে মাটি ভরাটের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনো কাজ হয়নি। মাদ্রাসার প্রধান জানিয়েছেন, তারা সরকারি বরাদ্দের মাত্র ৪০ হাজার টাকা পেয়ে ঘরের মেরামত করেছেন।
সদর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বুলবুল বলেন, “প্রকল্পের কাজ মোটামুটি ভালো হয়েছে, তবে কিছু প্রকল্প সম্পর্কে আমি অবগত নই।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, প্রকল্পের কাজ শতভাগ সঠিক হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসেনি।
উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বেশিরভাগ প্রকল্পের কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে মধ্যসত্তভুগীকে কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক নির্ধারণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
টিআর প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বদলে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রকল্প কমিটি গঠনে স্বচ্ছতা নেই, বাস্তবায়নে জবাবদিহি নেই এবং তদারকিতে দায়সারা মনোভাব দেখা যায়। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে এবং উন্নয়ন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এসব অনিয়ম পূর্বপরিকল্পিত। প্রকল্পের টাকা মাঠে কাজে না গেলে প্রকল্পের কোনো মানে নেই। তারা দাবি করছেন, অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনিছুর রহমান খান বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
