ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আশ্রয়ণের ঘর আছে, মানুষ নেই

আশ্রয়ণের ঘর আছে, মানুষ নেই

রংপুরের পীরগাছার প্রতিপাল গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এখন আর কেউ থাকেনা। ২৮টি ঘরে সবগুলো তালাবদ্ধ। ফলে ঝোপ-ঝাড়ে ভরে গেছে ঘরগুলো। কোথাও ধরেছে ফাটল, কোথাও দেখা দিয়েছে ভাঙ্গণ। এ প্রকল্পে যাওয়ার নেই কোনো রাস্তা, নেই জীবিকার ব্যবস্থাও। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আর কেউ থাকেন না। ফিরে গেছেন পুরোনো অস্থায়ী ঠিকানায়। অপরিকল্পিতভাবে একটি নদীর পাড়ে এসব ঘর নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদীর পাড়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের থাকার জন্য ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যে ঘরগুলো পতিত হাসিনা সরকারের উপহারের ঘর হিসেবে পরিচিতি ছিল। যার প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বেশিরভাগ ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয় পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দাদের। তবে বরাদ্দ পেয়ে সেসব ঘরে উঠার পর বছর খানেক যেতে না যেতেই সেখান থেকে একে একে চলে গেছেন সবাই।

সরেজমিনে সেই প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ। অল্প কিছু ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা থাকলেও বেশিরভাগ ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই। অন্যের বাড়ির আনাচে-কানাচে দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কেউ না থাকায় সেগুলো লতাপাতা, ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। স্থানীয়রা ঘরগুলোর বারান্দায় খড়, লাকড়ি স্তূপ করে রেখেছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই টিউবওয়েল। বিশেষ করে যে নদীর পাড়ে প্রকল্পটি করা হয়েছে সেই নদী পুনঃখননের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ঘরগুলো। ভেঙে পড়ছে অবকাঠামো।

এ সময় কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সাথে। তাদের অভিযোগ, সেখানকার স্থানীয় ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের এলাকার মানুষদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা নেই, এ জন্য তারা কিছুদিন থাকার পর চলে গেছে।

অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দেখা হয় ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দার সাথে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সেখানে জীবিকার কোনো ব্যবস্থা নাই। অনেকে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু রাস্তা না থাকায় তারা আর সেখানে থাকেন না। এছাড়াও নিম্নমানের নির্মাণের কারণে অনেক ঘরে ফাটল ধরেছে এজন্যও অনেকে সেখান থেকে চলে এসেছেন।

স্টেশনের ভ্রাম্যমাণ কলা বিক্রেতা প্রকাশ চন্দ্র মোহন্ত জানান, তার তিনটি সন্তান। তিনজনই স্টেশনের পাশে স্কুলে পড়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দূরত্ব স্কুল থেকে বেশ দূরে। প্রতিদিন তিনিসহ ৪ জনের যাতায়াত খরচ কুলাতে না পেরে তিনি আর সেখানে থাকেন না।

এ বিষয়ে তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল জানান, প্রকল্পে যাওয়ার জন্য নদীর পাড় বেঁধে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এরপরও সেখানে কেউ না থাকলে নোটিশ দিয়ে নতুন করে ভূমিহীনদের মাঝে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। সেখানে রাস্তা তৈরি করা হবে। জীবিকার ব্যবস্থাসহ আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও যদি কেউ না থাকে তাহলে নতুন করে ভূমিহীনদের সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।

আশ্রয়ণ,ঘর,মানুষ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত