নারায়ণগঞ্জে বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী আটক
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাউল শিল্পী আনিকা আক্তার অনিকা (১৯) রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। নিহতের পরিবারের দাবি, পারিবারিক কলহের জেরে অনিকাকে হত্যা করেছেন তার স্বামী হাবিবুর রহমান (২৫)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হাবিবুর রহমানকে আটক করেছে।
শনিবার ভোররাত ৩টার দিকে ফতুল্লার ভুইগড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে অনিকার মৃতদেহ স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বামী হাবিবুর।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হাবিবুরকে আটক করে এবং অনিকার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
নিহত আনিকা আক্তার অনিকা (১৯) মাদারীপুর জেলার মোস্তফাকুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে।
ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান, “ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। হাবিবুর ও অনিকা ভুইগড় এলাকার মাস্টারের ভাড়াটিয়া বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। ওই ভাড়া বাসাতেই ঘটনাটি ঘটে।”
অনিকার বাবা জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাঁচ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন হাবিবুর ও অনিকা। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে ঝামেলা চলছিল। স্ত্রীর সঙ্গে সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলেই হাবিবুর নতুন করে আবার বিয়ে করতেন। এভাবে অনিকার আগেও চারটি বিয়ে করেন তিনি। চার মাস আগে অনিকার একটি কন্যাসন্তান হয়েছে।
অনিকাকে নিয়ে তিনি প্রায়ই স্থানীয় বাউল ক্লাবে যেতেন। সারারাত গান গেয়ে অনিকা যা উপার্জন করতেন, সেই টাকা জোর করে নিয়ে যেতেন হাবিবুর।
জাহাঙ্গীর আলম আরও জানান, সম্প্রতি ‘মালা’ নামে এক নারী বাউল শিল্পীকে বিয়ে করেন হাবিবুর। বিষয়টি জানতে পেরে অনিকা স্বামীর কাছে এর সত্যতা জানতে চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিবুর ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। কয়েকদিন আগে তিনি অনিকাকে তালাকের প্রথম নোটিশ পাঠান।
ওই নোটিশ নিয়ে অনিকা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করেন। এতে হাবিবুর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ‘স্বর্ণা’ নামে আরেক বাউল নারী শিল্পীকে দিয়ে অনিকাকে হত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বর্ণা অনিকার বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। এসময় বেধড়ক মারধর করে অনিকার পরিহিত নাক, গলা ও হাতের স্বর্ণালঙ্কার খুলে নেয়। অনিকার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে স্বর্ণা কৌশলে পালিয়ে যায়।
অনিকারের পরিবারের দাবি, পরিকল্পিতভাবে অনিকাকে হত্যা করে বিষয়টি আত্মহত্যা হিসেবে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন হাবিবুর। তারা এ হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি অনিকাকে হত্যা করিনি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে এসে অনিকার খোঁজ নিতে ভুইগড়ের বাসায় যাই। দরজায় অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি, অনিকা জানালার গ্রিলে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছে। এরপর তাকে নিয়ে সাইনবোর্ডের প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
তিনি আরও বলেন, “অনিকাকে যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছি, সেটি ভুয়া ছিল—তাকে ভয় দেখানোর জন্যই পাঠানো হয়েছিল।”
