ওজন মেপে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রতিবন্ধী রাসেল

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩২ | অনলাইন সংস্করণ

  কামাল হোসেন, রাজবাড়ী

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাঁটতে পারেন না, হাতও প্রায় অকেজো। কথাও স্পষ্টভাবে বলতে পারেন না। তবুও থেমে নেই রাজবাড়ীর দাদশী ইউনিয়নের সিংগা মহম্মদপুর গ্রামের রাসেল দেওয়ান (৩২)। ভিক্ষার পথ বেছে না নিয়ে, আত্মসম্মান নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন হাট-বাজারে ডিজিটাল মিটার দিয়ে মানুষের ওজন মেপেই চলছে তার সংসার। প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে সিংগা বাজার থেকে ইজিবাইকে করে শহরে আসেন রাসেল। বাজারের এক কোণে বা গোদারবাজার, পদ্মা নদীর তীরের পর্যটনকেন্দ্রে বসে ওজন মাপার কাজ করেন। এভাবেই দিনে ৩০০–৪০০ টাকা আয় হয় তার।

সম্প্রতি রাজবাড়ী বড়বাজারের পাঁচতলা মোড় সংলগ্ন একটি ফার্মেসির সামনে দেখা যায় রাসেলকে। ফুটপাতে বসে আছেন তিনি; পাশে ডিজিটাল ওজন মেশিন, একটি ছোট ব্যাগ ও পানির বোতল। সাইকেলে ঝোলানো আছে সাইনবোর্ড: “৫ টাকায় ওজন মাপুন।”

রাসেল বলেন, “জন্ম থেকেই অসুস্থ। অন্যের কাছে হাত পাততে চাইনি। তাই ছোট ভগ্নিপতির কাছে একটি ডিজিটাল মিটার চাই। সেটি নিয়েই ওজন মেপে রোজগার করছি। যদি নিজস্ব একটি যানবাহন থাকত, তাহলে চলাফেরা সহজ হতো।”

তার স্বপ্ন বাড়িতে আলাদা করে একটি আধাপাকা ঘর তৈরি করা এবং ভবিষ্যতে একটি ছোট মুদির দোকান গড়ে তোলা।

রাসেলের মা পারু বেগম বলেন, “জন্ম থেকেই রাসেল প্রতিবন্ধী। ছোটবেলায় দাঁড়াতেও পারত না। তার চিকিৎসার জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করেছি। এখন কিছুটা হাঁটতে পারে। আমি বেঁচে আছি বলে কোনোভাবে চলছে। কিন্তু আমার মৃত্যুর পর ও কেমন করে বাঁচবে, তা নিয়ে চিন্তিত।”

রাজবাড়ীর বড়বাজারের জান্নাত মেডিসিন স্টোরের মালিক মাহফুজুর রহমান বলেন, “রাসেল দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসে ওজন মাপে। আমরা তাকে বসতে দিই এবং সহযোগিতা করি। সরকার যদি সহায়তা করত, তাহলে সে আরও ভালোভাবে বাঁচতে পারত।”

স্থানীয় বাসিন্দা রেজওয়ান সরদার বলেন, “আমাদের সমাজে অনেক সুস্থ মানুষ কাজ না করে ভবঘুরে জীবন কাটায়। কিন্তু রাসেল শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও আত্মসম্মান নিয়ে কাজ করছে। এটি সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত।”

রাজবাড়ী ভান্ডারিয়া সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত মোল্লা বলেন, “আমাদের ওজন মাপার দরকার ছিল না। তবুও মেপেছি, কারণ রাসেল ভিক্ষা নয়, পরিশ্রম করে খাচ্ছে।”

রাজবাড়ী লেখক-পাঠক কেন্দ্রের সভাপতি কবি নেহাল আহম্মেদ বলেন, “প্রতিবন্ধী হয়েও রাসেল ভিক্ষা না করে কাজ করছে, এটি প্রশংসনীয়। রাষ্ট্রের উচিত এমন মানুষদের পাশে দাঁড়ানো।”

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস বলেন, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা ইতিবাচক দিক। যদি তারা চান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ঋণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেওয়া সম্ভব।”