ভোলায় টাইফয়েডের টিকা পাবে ৬ লাখ ৭৮ হাজার শিশু

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  ভোলা প্রতিনিধি

ভোলার সাত উপজেলায় এবার টাইফয়েডের টিকা পাবে ৬ লাখ ৭৮ হাজার শিশু। এই টিকা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, টাইফয়েড টিকা গ্রহণের পর অন্যান্য টিকার মতোই সামান্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- টিকা দেওয়ার স্থানে লালচে ভাব, হালকা ব্যথা, মৃদু জ্বর বা ক্লান্তি। এগুলো অল্প সময়েই সেরে যায়, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টায় সিভিল সার্জনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. মনিরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই টাইফয়েড জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়। ২০২১ সালে প্রায় ৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে মারা যায়, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই শিশু। বর্তমানে টাইফয়েডের প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের অনেকগুলো আর কার্যকর নয়, ফলে ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েডের ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় টিকা গ্রহণে সংক্রমণ কমবে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারও হ্রাস পাবে।

তিনি বলেন, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে মাসব্যাপী ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫’ শুরু হবে। এই ধারাবাহিকতায় ভোলা জেলায় মোট ৩ হাজার ৯ শত ৬০টি কেন্দ্রে প্রায় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭ শত ৭৮ শিশুকে এক ডোজ কার্যকর টাইফয়েড টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। যার মধ্যে ২ হাজার ৬ শত ৮৭টি স্কুলের ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮ শত ৫৮ জন শিশু-কিশোর এবং যারা স্কুলগামী নয় এমন কমিউনিটির ২ লাখ ৫০ হাজার ৯ শত ২০ জনকে এই টিকা দেওয়া হবে। 

সিভিল সার্জন বলেন, এই টিকাদান কর্মসূচি ১৮ কর্মদিবসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। প্রথম ১০দিন স্কুল ক্যাম্পেইন এবং পরবর্তী ৮ দিন কমিউনিটির বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীগণ টিকা দিবেন। ইতোমধ্যে আমরা ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬ শত ৪০টি টিকার ডোজ হাতে পেয়েছি বাকি টিকার ডোজগুলো খুব শিগগিরই পেয়ে যাবো।

তিনি আরও বলেন, টিকাদান কার্যক্রম সফল করতে বিভিন্ন দপ্তর, স্কুল, মাদ্রাসা ও এনজিও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় সুবিধাবঞ্চিত, বেদে, এতিমখানা ও পথশিশুদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। তবে ৯ মাসের কম বা ১৫ বছরের বেশি বয়সের কাউকে এই টিকা দেওয়া হবে না। যেসব বাচ্চারা অসুস্থ বা জ্বরে আক্রান্ত থাকবে তাদেরকে টিকা দেওয়া হবে না, তবে সুস্থ হওয়ার পর টিকা দেওয়া হবে। এছাড়াও কোন গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মাকে এই টিকা দেওয়া হবে না।

ডা. মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ইপিআই ব্যবস্থায় দেওয়া এই টাইফয়েড টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ও নিরাপদ। এটি কনজুগেট ভ্যাকসিন হওয়ায় আরও কার্যকর এবং পরীক্ষামূলক নয়। সরকার দেশের শিশুদের নিরাপদ টিকা প্রদানে সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। সামান্যতম ঝুঁকি থাকলে সরকার কখনো সেই টিকা প্রয়োগ করত না।

তিনি জানান, টিকা নেওয়ার সময় কিছু কিশোর-কিশোরীর অজ্ঞান হয়ে পড়া বা অসুস্থতার বিষয়টি ‘ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস’ যা মানসিক ভীতি বা গুজবজনিত প্রতিক্রিয়া। এর সঙ্গে টিকার কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি আরও যোগ করেন, এই টিকায় শরিয়তবিরোধী কোনো উপাদান নেই। এটি সৌদি হালাল সেন্টার কর্তৃক হালাল সনদপ্রাপ্ত এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ।

সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক আজকের ভোলার সম্পাদক শওকাত হোসেন, ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শরীফ আহমেদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. মোহাম্মদ খায়েম ফারুকীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।