দিনাজপুরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কূপের অস্তিত্ব
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
মো. সিদ্দিক হোসেন, দিনাজপুর

দিনাজপুরের জেলায় গ্রামীণ জনপদে একসময় পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস ছিল কূপ। কিন্তু কালের বিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আজ সেই কূপ হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠা এই কূপ আজ ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে।
একসময় দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি গ্রামে, এমনকি শহরাঞ্চলেও দেখা যেত কূপ। গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে কিংবা গ্রামের মাঝখানে কূপ খনন করা হতো বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহের জন্য। এ পানি রান্না, খাওয়া, গোসল এমনকি কৃষিকাজেও ব্যবহার হতো।
গ্রামীণ নারীরা সকালে কিংবা বিকেলে কূপ থেকে পানি তোলার পাশাপাশি আড্ডায় মেতেন। কূপ গ্রামীণ সমাজের সামাজিক যোগাযোগ ও আন্তরিকতার এক বড় ক্ষেত্রও ছিল।
বর্তমানে টিউবওয়েল, ডীপ টিউবওয়েল ও মোটরচালিত পানির সহজলভ্যতায় কূপ ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত। নতুন প্রজন্মের অনেকেই কূপের নাম শুনলেও বাস্তবে দেখার সুযোগ পায়নি। শহরের আশপাশ এবং প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বহু কূপ ভরাট বা ভেঙে পড়েছে। কিছু কূপ এখনও আছে, তবে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
স্থানীয় প্রবীণরা জানিয়েছেন, কূপ একসময় ছিল জীবনের অংশ। পুকুর বা নদী দূষিত হলে কূপের পানিই ছিল ভরসা। কূপকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ সংস্কৃতির বিকাশও ঘটেছিল। বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে কূপের পানি ব্যবহৃত হতো।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যাপক আশিস কুমার সরকার বলেন, “কূপ কেবল পানির উৎস নয়, এটি ছিল গ্রামীণ সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। কালের পরিবর্তনে সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। তাই সচেতনতা ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নাহলে কয়েক বছরের মধ্যে কূপ কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকলেও হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এক মূল্যবান ঐতিহ্য — কূপ।”
