রংপুরে ভেজাল গুড় উৎপাদন; ২ লাখ টাকা জরিমানা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২১:১৮ | অনলাইন সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো

রংপুর মহানগরীর দর্শনায় ভেজাল গুড় উৎপাদনের অভিযোগে মেসার্স ‘মা-বাবার দোয়া’ গুড় কারখানার মালিক নুর মোহাম্মদকে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। রংপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানে রংপুর জেলা কার্যালয় ও পুলিশের একটি দল সহযোগিতা করে। এসময় কারখানায় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার, পঁচা মিষ্টি ও নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে গুড় উৎপাদনের প্রমাণ মেলে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জানান, “মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপায়ে অবৈধ পণ্য ব্যবহার করে গুড় প্রস্তুত করা হচ্ছিল। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুসারে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের জেল দিয়েছি এবং কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদনের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন কোনও প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানায় ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছিল, যা বাজারে ছড়িয়ে পড়ছিল বিভিন্ন হাটবাজারে। আখের রসের পরিবর্তে ময়দা, চিনি, হাইড্রোজ, সোডা, গো-খাদ্য চিটাগুড়, নালি ও চিনি দিয়ে নকল গুড় তৈরি করা হতো। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ভেজাল গুড় সারাবছর তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীরহাট সংলগ্ন ঠাকুদাস লক্ষিপুর (তেলি পাড়া) গ্রামে এই কারবার চলছে। মৃত নুরু মিয়ার ছেলে হাফিজার রহমান আখ মৌসুমের শুরু থেকেই গুড় তৈরির কাজ করেন। আখের আবাদ না থাকলেও তার কারখানায় বারোমাস ভেজাল গুড় তৈরি হয়।
মানবদেহের ক্ষতিকর বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে প্রতিদিন কড়াইয়ে আগুন দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। ২–৩ জন শ্রমিক প্রতিদিন ভেজাল গুড় তৈরি করে মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করে পরে বাজারজাত করে। অপরদিকে উপজেলার চতরাহাট এলাকার যাদবপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোনাজ্জল হোসেনও একই পদ্ধতিতে আখের রস ছাড়াই গুড় তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রশাসনের চোখের সামনেই এ ধরনের ভেজাল কারখানা চলছে, কিন্তু কার্যকর তদারকি নেই। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর গোলাম মোস্তফা নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, “খালাশপীর (তেলী পাড়া) কারখানায় নালি গুড়, চিটা গুড়, সুজি, ময়দা, পানি, চিনি ও বিষাক্ত রং মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি হয়। এই গুড় আমরা নিজেরাও খাই না। আখ মৌসুমে কিছুদিন আসল গুড় তৈরি হয়, বাকিটা ভেজাল।”
উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেছি। এরপরও যদি কেউ ভেজাল গুড় তৈরি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
