সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি ‘আইভি ভবন’ এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২০ | অনলাইন সংস্করণ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের সন্তান জিল্লুর রহমানের বাড়ি ‘আইভি ভবন’। তার প্রয়াত স্ত্রী, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের স্মৃতিস্বরূপ বাসভবনের নাম রাখা হয় ‘আইভি ভবন’। এরপর থেকে এটি ওই নামেই পরিচিতি পায়।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর নিস্তব্ধ বাড়িটির চিত্র এখন পাল্টে গেছে। বর্তমানে ‘আইভি ভবন’ রূপ নিয়েছে সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। বাসার সামনে ঝুলছে স্কুলের নামফলক, চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। বাইরে থেকে শোনা যায় শিশুদের পাঠদানের শব্দ।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ভৈরবের এ বাড়ির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিন্ডারগার্টেন স্কুলটির মূল মালিক ভৈরবের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত বাড়িটি ভাড়ায় নিয়েছেন। তবে বাড়িটির নিচতলাটি ভাড়া নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা হলেও দোতলা ভাড়া দেওয়া হয়নি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আত্মীয় মরহুম তারা মিয়ার ছেলে নইম মোল্লা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পার্টনার। তার সহায়তায় বাসভবনটি ভাড়া নেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারা দেশের মতো ‘আইভি ভবন’-এও দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর প্রায় এক বছর ধরে বাসাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পরিত্যক্ত পড়ে ছিল। জিল্লুর রহমানের ভৈরবে আত্মীয়-স্বজন থাকলেও কেউ বাসায় যেত না এবং সেটি সংস্কারও করা হয়নি।
অনেক উৎসুক মানুষ বাড়ির বাইরে থেকে সেটি দেখতে যেতেন, ছবি তুলতেন। হঠাৎ এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসে বাড়িটির সামনে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নামফলক। এরপরই স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন ও উদ্বেগ দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কিন্ডারগার্টেন মালিক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত বলেন, “আমার স্কুলটি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তখন জিল্লুর রহমানের চাচাতো ভাই তারা মিয়া আমার ব্যবসার অংশীদার ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে নইম মোল্লা এখন অংশীদার হিসেবে আমার সঙ্গে আছেন। মূলত নইম মোল্লাই জিল্লুর রহমানের বাসাটি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তার সঙ্গে শর্ত মোতাবেক নিজ অর্থায়নে ‘আইভি ভবন’-এর সংস্কার ও মেরামত করিয়ে নিচতলায় স্কুল কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আর বাড়ি সংস্কার ও মেরামতে যে টাকা খরচ হয়েছে, সেটি প্রতিমাসের ভাড়া থেকে কেটে রাখা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে জিল্লুর রহমানের পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার দুই মেয়ে রয়েছেন, তবে তারা কোথায় আছেন সে বিষয়েও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মাধ্যমে আমি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত আমাকে এ বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে কিছু জানায়নি বা কোনো অভিযোগও করেননি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জের ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি পাঁচবার কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে তিনি ছিলেন একজন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ২০০৯ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাংলাদেশের ১৪তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর থেকে ওই আসনে তার একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন চারবার সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে পরিবারের সবাই বর্তমানে ঢাকার গুলশানে বসবাস করার কারণে ভৈরবের পৈতৃক বাসায় তাদের আসা-যাওয়া ছিল খুবই সীমিত। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সময় তিনি ভৈরবে বাসায় যেতেন। বাসাটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন একজন কেয়ারটেকার।
