বৃক্ষশূন্যতা ডেকে আনতে পারে পরিবেশ বিপর্যয়; হোন বৃক্ষপ্রেমী
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৩০ | অনলাইন সংস্করণ
আরিফুর রশীদ, লালমনিরহাট

বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষ অমূল্য সম্পদ। বৃক্ষহীন জীবন যেন ধূধূ মরুদ্যান। কথিত আছে, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ একসময় ছিল বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ। পাখ-পাখালির মধুর গুঞ্জনে মন ভরে উঠত, প্রশান্তি নেমে আসত। বহতা নদীর মাঝি নৌকায় পাল তুলে গাইত জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওইয়া গান।
অগ্রহায়ণের শেষে ভাপা পিঠার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত ঘরে ঘরে। হাওড়-বাওড় ও খাল-বিলে মাছ ধরায় মেতে উঠত গ্রামবাংলা। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল সেই সোনা ঝরা দিনগুলো? শৈশব-কৈশোরের সেই স্মৃতি এখনও তাড়িত করে আমাদের।
তবু আমরা তো আর ধূসর দিনের দুঃখ বোধ নিয়ে বাঁচতে পারি না। প্রকৃত অর্থে বাঁচতে হলে হারানো বাংলাকে আবারও ফিরে পেতে হবে। আর তা আমরা পারি—পারব কি না, সেই প্রশ্ন আজও রয়ে গেছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের বনভূমি ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে। বৃক্ষ নিধন চলছে অব্যাহতভাবে। পাশাপাশি ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে, আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দ্বিগুণ উৎপাদন করেও আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। যদি আমরা প্রত্যেকে অঙ্গীকার করি যে অন্তত এ বছর একটি করে ফলজ, বনজ বা ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করব এবং তার পরিচর্যার দায়িত্ব নেব, তাহলে কী দাঁড়ায়? এক বছরে আমাদের পরিবেশ রক্ষায় পেয়ে যাব প্রায় ১৮ কোটি বৃক্ষ।
বৃক্ষরোপণের ফলে অনেক বিলুপ্তপ্রায় গাছ আবারও ফিরে আসতে পারে, গৌরব ফিরিয়ে দিতে পারে আমাদের। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিশু-কিশোররা অনেক গাছের নামই জানে না। বৃক্ষরোপণ হলে তারা এসব গাছ সম্পর্কে জানতে পারবে, ফুলের সৌরভ, পাখিদের কলকাকলিতে প্রাণ হয়ে উঠবে উচ্ছ্বল। বনভূমির অভাবে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় পাখিরাও ফিরে আসবে। এখনও গ্রামবাংলার প্রান্তরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শূন্যে উড়ে বেড়ায়, তাদের সম্পর্কে জানা ও সুরক্ষার সুযোগ তৈরি হবে।
কারুকার্যময় পাখিদের নীড় হয়ে উঠবে নিরাপদ প্রজননের ঠিকানা। কবির ভাষায়—“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।” এমন কাব্য যেন শুধু বইয়ের পাতায় বা ছবিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, আজকের শিশু-কিশোরদের বাস্তবে দেখার সুযোগ হোক—এই কামনাই করি।
বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ ‘নাগ লিঙ্গম’। তারপরও এখানে এমন অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে, যা না দেখলে চোখ সার্থক হয় না। জেলা শহর থেকে কিছু দূর গেলে কোথাও কোথাও দেখা যায় গাছগাছালি ভরপুর, ছায়াঘন সবুজের সমারোহ, পাখিদের শিসপিস পথচারীদের প্রাণ ভরিয়ে তোলে।
নয়নাভিরাম বৃক্ষ থেকে বইছে সতেজ বাতাস। এর সঙ্গে মাটির ক্ষয়রোধ, পাখিদের প্রজনন ক্ষেত্র, হারিয়ে যাওয়া ঔষধি গাছের পুনর্জাগরণ, ফলফলাদি, বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠ ও জৈবসার পাচ্ছেন এলাকাবাসী।
এভাবেই যদি আমরা প্রত্যেকে বৃক্ষপ্রেমী হয়ে উঠি, তবে বাংলাদেশের গাছগাছালি, ফুল-পাখি আগামী প্রজন্মের কাছে ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ বলার দৃঢ় প্রত্যয় হয়ে উঠবে। চিরসবুজের দেশ ফিরে পাবো আমরা—এমনটাই আশা করছে লালমনিরহাটবাসী।
