জামায়াত কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়বে: দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, ছাত্রশিবিরের ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় গেলে কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলবে। তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও-১ এর আয়োজনে শ্রমিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

দেলোয়ার হোসেন শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এখন উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি, তাদের পরিশ্রমই সফলতার মূল চাবিকাঠি। শ্রমিক ভাইরা তাদের মাথার ঘাম পাঁয়ে ফেলে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের পরিশ্রমের জন্য বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও তারা রাজনৈতিক নেতাদের বন্ধু হতে পারে না, তারা এমপিদের কাছে যেতে পারে না। তাদের কাছে যেতে হলে ১৭-১৮টা ব্যারিকেড ভেঙ্গে কেউ যেতে পারে, আর কেউ যেতেই পারে না। এটি শুধুমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থা না থাকার কারণে।

তিনি বলেন, আজ কৃষক ভাইরা যারা কঠোর পরিশ্রম করে চাল উৎপাদন করছে, তাদের সন্তানরা যখন পড়ালেখা করতে যায় তখন জমি বিক্রি করতে হয়। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে তাদের লেখাপড়া বিনামূল্যে নিশ্চিত করা হবে। ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল আছে, কিন্তু উন্নত চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য সমস্যা হলে রোগীকে দিনাজপুর, রংপুর বা ঢাকায় রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, অধিকাংশ মানুষের নেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। যারা যেতে পারে তারাও জমি-জমা বিক্রি করে চিকিৎসা করতে যাচ্ছে। শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ। তাই আগামীদিনে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের যে সম্পদ রয়েছে, সেই সম্পদ দিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়ন সম্ভব। যে পরিমাণ বরাদ্দ ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য আসে, তা শুধুমাত্র অসাধু রাজনীতিবিদদের জন্য খরচ হয়। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২২৫০ কিলোমিটার রাস্তা আছে, যার মাত্র সাড়ে ৭শত কিলোমিটার পাকা। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে অনেকে এমপি বা মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু এই রাস্তা ও ঘাট সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বরাদ্দ আসলেও তা খেয়ে ফেলা হয়। যদি বরাদ্দ সঠিকভাবে কাজে লাগত, অধিকাংশ রাস্তা পাকা হয়ে যেত। নির্বাচিত হওয়া না হলেও ইতিমধ্যে কাঁচা রাস্তার তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই রাস্তা পাকা করতে হবে।

তিনি বিমানবন্দর প্রসঙ্গে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু রাজনীতিবিদদের কারণে বিমানবন্দর চালু হয়নি। তারা যদি উদ্যোগ নিতো, বিমানবন্দর অনেক আগেই চালু হতো। স্বাধীনতার পরে অনেক দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, শুধুমাত্র একটি দলকে ক্ষমতায় আনতে পারেনি, সেটি হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দেলোয়ার হোসেন হিন্দু, খ্রিস্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের সঙ্গে সবসময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করে দেয় একটি কুচক্রী মহল ও ষড়যন্ত্রকারীরা। তারা বলে, ক্ষমতায় এলে হিন্দুদের থাকতে পারবে না, তাদের মন্দির থাকবে না, গীর্জা থাকবে না। ৫৪ বছরে কেউ কি প্রমাণ দেখাতে পেরেছে? জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মী চাঁদাবাজি করেছে, মন্দির বা গীর্জায় আঘাত করেছে, বাড়িঘর দখল করেছে বা লুটপাট করেছে? বরং জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র শিবিরের কর্মীরা তাদের পাহারা দিয়েছে।

সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ কফিল উদ্দীন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাসেম বাদল, জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর এবং ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ অনেকে।