ভোলার মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে নৌযান

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  ভোলা প্রতিনিধি

ভোলার মেঘনা নদীর ডেঞ্জার জোনে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলা-লক্ষীপুরসহ অন্তত ২৫টি রুটে চলছে ফিটনেস বিহীন অবৈধ নৌযান। প্রতিদিন এসব রুট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনা পারাপার করছেন হাজার হাজার মানুষ।

ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের কারণে নৌ দুর্ঘটনার আশংকা থাকলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ নৌযান বন্ধ করতে পারছে না। তারা কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটে চলছে ছোট ছোট ট্রলার ও স্পীডবোটের রমরমা ব্যবসা।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মার্চ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভোলার ইলিশা থেকে মেঘনা নদীর দক্ষিণ বঙ্গপোসাগর মোহনা পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার এলাকাকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সি-সার্ভ ছাড়া সকল ধরনের অনিরাপদ নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলার উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন ছোট ছোট কাঠের নৌযান, স্পীডবোট এবং ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলছে। ভোলা-লক্ষীপুর রুটে দু’টি লঞ্চ ও একটি সি-ট্রাক সরকারি অনুমোদন নিয়ে চললেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের সংযোগের সহজ মাধ্যম হওয়ায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক নির্ভরযোগ্য যান থাকায় দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীরা বাধ্য হয়ে অবৈধ ট্রলার ও স্পীডবোটে উত্তাল মেঘনা পারাপার করছে।

ইলিশা ঘাটের ইজারাদারসহ একাধিক যাত্রী জানান, শীত মৌসুমে ১১টি ছোট লঞ্চ চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র অনুমোদিত ২টি লঞ্চ ও ১টি সি-ট্রাক চলাচল করছে। ফলে বহু যাত্রী দূর-দূরান্ত থেকে আসলেও নিরাপদ যানবাহন পাচ্ছে না এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার ও স্পীডবোটে চলাচল করছে।

এদিকে, ভোলার ইলিশা ফেরি ঘাটের কাছেই নৌথানা ও ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে ভোলা-ইলিশা ফেরিঘাট থেকে লক্ষীপুর রুটে প্রতিদিন ট্রলার ও স্পীডবোটে যাত্রী পারাপার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ভোলা ইলিশা ফেরিঘাটের অবৈধ ট্রলার পরিচালনাকারী জামাল স্বীকার করেন, তিনি অবৈধভাবে ট্রলার চালাচ্ছেন। তার ট্রলারে ডিফেন্সের লোক চলাচল করে, তবে ধারনক্ষমতার চাইতে কম লোক নিয়ে আবহাওয়া ভালো থাকলে ট্রলার ছাড়েন। পুলিশ জানলেও তার ওপর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

শুধু ভোলা-লক্ষীপুর রুটই নয়, ভোলার দৌলতখান, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিন থেকে লক্ষীপুরের আলেকজান্ডার, তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ঘাট, চরফ্যাশনের বেতুয়া, তজুমদ্দিন থেকে চরজহিরউদ্দিন, হাজিরহাট ঘাট থেকে মঙ্গলসিকদার, হাজিরহাট ঘাট থেকে কলাতলীর চর, তজুমদ্দিনের চৌমুহনী লঞ্চঘাট থেকে মনপুরা পর্যন্ত অন্তত ২৫টি রুটে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলছে।

সরকারি নির্ভরযোগ্য নৌযান না থাকায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে জীবন বাজি রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে যাতায়াত করছে। প্রতিদিন ছোট ছোট ফিটনেসবিহীন কাঠের নৌকা চললেও এ বিষয়টি তদারকি করার কেউ নেই। প্রশাসনের নিরবতায় বড় ধরনের নৌ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ যাত্রীরা।

যাত্রী আঃ মতিন কেরানি, মাহাবুব, রুবেলসহ অনেকে জানান, মনপুরা-তজুমদ্দিন নৌরুটে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ হওয়ায় বাধ্য হয়েই নদীপথে যাতায়াত করতে হয়। তবে সি-ট্রাকের ইজারাদার মো. নুরুদ্দিন মিয়া বলেন, যেহেতু মেঘনা সারাবছরই ডেঞ্জারজোন, তাই ফিটনেসবিহীন এসব ছোট ট্রলারের চলাচলের বৈধতা নেই। তবুও প্রতিপক্ষ জোরপূর্বক মনপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে।

জেলা পরিষদের সাব-ইজারাদার মো. বাপ্পি বলেন, তিনি জেলা পরিষদের সাব-ইজারাদার হিসেবে ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন। তবে জোরপূর্বক কোনো বিষয় নেই; মানুষ তার ইচ্ছামত পারাপার হচ্ছে। তিনি সি-সার্ভের রিপোর্ট দাবি করলেও তা প্রমাণ করতে পারেননি।

ভোলা নদী বন্দরের পরিবহন বিভাগের সহকারি পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান জানান, অবৈধ নৌযান বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।