দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা: ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:২৬ | অনলাইন সংস্করণ
কক্সবাজার অফিস

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় মুক্তিপণের দাবিতে সহোদর দুই শিশুকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং তিন নারীসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে একজনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারিক হাকিম মো. ওসমান গণির আদালত এ রায় দেন বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মীর মোশারফ হোসেন টিটু।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন— রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, আব্দু শুক্কুর, আলমগীর হোসেন প্রকাশ বুলু, মিজানুর রহমান ও মো. শহীদুল্লাহ।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন— একই এলাকার আবদুল মজিদ বদাইয়া, ফাতেমা খাতুন, রাশেদা বেগম ও লায়লা বেগম।
হত্যার শিকার মো. হাসান ওরফে শাকিল (১১) ও মো. হোসেন ওরফে কাজল (৮) একই এলাকার মো. ফোরকান ওরফে মিন্টুর ছেলে।
মামলার নথির বরাতে মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি বিকেলে রামু উপজেলা গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল এলাকার দোকান কর্মচারী মো. ফোরকানের দুই ছেলে হাসান শাকিল (১০) ও হোসেন কাজল (৮) নামের শিশুকে বাড়ির অদূরে খেলা অবস্থায় পাখির ছানা দেয়ার লোভ দেখিয়ে এই এলাকার আবদু শুক্কুরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমসহ একটি চক্র অপহরণ করে।
হাসান বাইশাঁরী শাহনূর উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা এবং হোসেন বড়বিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
অপহরণের পর ওই দিন রাতে মুঠোফোনের মাধ্যমে পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র। পরে অপহৃতদের সন্ধান না পেয়ে ওই শিশুদের বাবা বাদী হয়ে গর্জনিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি নথিভুক্ত হওয়ার পরপরই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে গ্রেপ্তার আসামিদের স্বীকারোক্তি মতে স্থানীয় একটি পাহাড়ের জঙ্গলে গুমের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় ওই দুই শিশুর মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী।
মীর মোশারফ হোসেন টিটু বলেন, বিগত ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন। এরপর আদালত গত ২০১৯ সালের ২০ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী জানান, নয় বছর ধরে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলে। এই সময় সাক্ষী-প্রমাণসহ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। মঙ্গলবার নির্ধারিত দিনে আদালত আইনের বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়া তাদেরকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণাকালে প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্যরা সবাই পলাতক রয়েছেন। নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মোকারমা সুলতানা পুতু নামের তরুণীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।
