দিনাজপুরে ইজিবাইকের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল রিকশা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪০ | অনলাইন সংস্করণ
সিদ্দিক হোসেন, দিনাজপুর

ইজিবাইকের প্রভাবে দিনাজপুর শহরসহ পুরো জেলা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে প্যাডেল চালিত রিকশা। ইজিবাইকে চড়ে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া যায়, সে কারণেই এখন কেউ আর প্যাডেল চালিত রিকশায় চড়তে চান না।
প্যাডেল চালিত রিকশা হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে রিকশাচালকরা জানিয়েছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক এসেছে। এই বাহনে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যায়, তাই সবাই সেটাতেই চড়তে চান।
দিনাজপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দিনাজপুর পৌরসভা এলাকায় পৌরসভা কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া আরও প্রায় ২০ হাজার ইজিবাইক রয়েছে। দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইক ছাড়াও অনেক ইজিবাইক শহরে চলাচল করছে।
বর্তমানে দিনাজপুর পৌরসভা এলাকায় মাত্র ৪০ থেকে ৫০টি প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচল করছে, যেখানে ৫ বছর আগে, যখন ইজিবাইক ছিল না, তখন এর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার।
দিনাজপুর জেলা অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও অটোবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দিনাজপুর জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার, আর লাইসেন্সবিহীন আরও প্রায় ৩৫ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে।
দিনাজপুর শহরের সদর হাসপাতাল মোড়, বালুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, সুইহারী টেম্পো স্ট্যান্ড, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, রামনগর মদিনা মসজিদ মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রিকশাস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে—এখন আর কোথাও প্যাডেল চালিত রিকশার দেখা মেলে না। যেসব জায়গা একসময় রিকশাস্ট্যান্ড ছিল, এখন সেখানে ইজিবাইকের স্ট্যান্ড কিংবা চার্জ দেওয়ার গ্যারেজ তৈরি হয়েছে।
প্যাডেল চালিত রিকশায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় বেশি লাগে। অপরদিকে ইজিবাইকে লাগে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ সময়। এতে সময় ও টাকার উভয় সাশ্রয় হয়। একসঙ্গে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারায় যাত্রীর যেমন খরচ কমে, তেমনি চালকরাও লাভবান হন।
প্যাডেল চালিত রিকশাচালকদের প্রতিদিনের ভাড়া ৫০ টাকা, আর ইজিবাইকের চালকদের দিতে হয় ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত। এ কারণে অনেক রিকশার মালিক এখন ইজিবাইক কিনে তা ভাড়ায় দিচ্ছেন।
দিনাজপুর শহরের সদর হাসপাতাল মোড়ে অপেক্ষমাণ প্যাডেল রিকশাচালক মজিবর রহমান (৪৮) জানান, বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষ আর প্যাডেল রিকশায় চড়তে চান না। সবাই ইজিবাইকেই যাতায়াত করতে পছন্দ করেন। রিকশায় দুইজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যায় না, কিন্তু ইজিবাইকে একসঙ্গে ৮ থেকে ১০ জন যাত্রী নেওয়া যায় এবং দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
বালুয়াডাঙ্গা এলাকার ইজিবাইক চার্জার গোডাউনের মালিক খালিদ হোসেন বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমার ১২টি রিকশা ছিল। প্রতিটি রিকশা থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ টাকা করে ভাড়া পেতাম। এখন আমার ৮টি ইজিবাইক ভাড়ায় চলছে, প্রতিদিন প্রতিটি থেকে ৩৫০ টাকা পাই। এই পার্থক্যের কারণে এখন আর কেউ প্যাডেল চালিত রিকশা রাখতে চায় না।”
