মেসি হতে চান তাড়াইলের রাহুল হক

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

  রুহুল আমিন, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ)

বাবা নার্সারির ব্যবসা করেন, বাড়িতে দোচালা টিনের ঘর। সাতজনের সংসারে দরিদ্র বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাতে কী! পরিবারের সদস্য সাত বছরের রাহুল হক তো মেসি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। স্থানীয় বাজারে টিভিতে মেসির খেলা দেখে তার একটাই চাওয়া—তাকে মেসি হতেই হবে।

তার খেলা দেখার জন্য প্রতিদিনই তার বাড়িতে ছোট-বড় বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। অনেকের অনুরোধে সে বাড়ির ছোট্ট উঠোনে বল নিয়ে বিভিন্ন কারুকাজের অনুশীলনও দেখাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের আইনাল মিয়ার সাত বছরের ছোট্ট বালক রাহুল হকের এই ফুটবল জাদু নিয়ে এখন আলোচনায় পুরো এলাকা। বেলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত রাহুল স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও কোচ মিজানুর রহমানের উৎসাহ ও প্রেরণায় এরই মধ্যে রপ্ত করেছে ফুটবলের নানা কৌশল।

দু'হাত পেছনে রেখে ডান-বাম পা, পিঠ ও মাথায় বল নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘক্ষণ বল মাটিতে না ফেলেই খেলতে পারে সে। নিজের বয়সের চেয়ে কয়েক বছরের বড়দের সঙ্গে ছোট মাঠে অনুশীলনেও দারুণ পারদর্শিতা দেখাচ্ছে রাহুল।

অনুশীলনে দেখা গেছে, তার বল নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন কৌশল—বল পায়ে ড্রিবলিং, রিসিভ, দ্রুততা, প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠানো—সবকিছুই সে দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন এবং স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় মেসিখ্যাত রাহুলের দরিদ্র বাবা আইনাল মিয়া জানান, “স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও সাত বছরের ছেলে নিয়ে আমার সাত সদস্যের পরিবার। তাড়াইল উপজেলা সদর বাজারে একটি নার্সারি ব্যবসা করি। খাইয়া-পিন্দা বাঁচনডাই আমার লাইগা অনেক কষ্টের। পোলায় বাজারের টিভিতে মেসির খেলা দেইখা অহন তারও মেসি হওনের শখ। পোলার ফুটবল প্র্যাকটিস দেখতে প্রতিদিনই মানুষ বাড়িতে ভিড় জমায়। এইসব দেইখা অহন আমারও শখ, পোলায় যেনো বড় হইয়া একজন বড় ফুটবলার অইতে পারে। আমি গরিব মানুষ, কেমতে কি করমু জানিনা। আমি গরিব মানুষ, পোলার স্বপ্ন এমতে পূরণ করমু? তয়, পোলার স্বপ্ন পূরণ করতে সরকারের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। সরকার যদি একটু দয়া করে, তয় আমার পোলা একদিন অবশ্যই জাতীয় দলে খেলব, একদিন উজ্জ্বল করব সবার মুখ।”

তাড়াইল ফুটবল একাডেমির পৃষ্ঠপোষক ও সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের উপজেলার খুদে মেসি খ্যাত রাহুলের ক্রিয়াশৈলী সত্যিই চমৎকার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাহুলকে দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভালো কিছু করা সম্ভব।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রতিবেশী আবদুল করিম বলেন, “আমাদের মেসির (রাহুল) প্র্যাকটিস বা খেলা দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে অনেক মানুষ আইসা ভিড় জমায়। আমরা প্রতিদিনই ওর প্র্যাকটিস দেখি।”

এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জিসান আলী বলেন, “তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড়দের বাছাই করে ভালো পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমনিতেই আমরা কাজ করি। বেলংকা গ্রামের স্থানীয় মেসি খ্যাত রাহুলের কথা আমরা শুনেছি, ওকে নিয়ে ভালো কিছু করার চিন্তা আমাদের রয়েছে।”