স্কুল শিক্ষককে অপহরণ করে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২০:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান ও তার সহযোগী আবুল কালাম আজাদ ওরপে নয়া তালুকদারসহ একাধিক সন্ত্রাসী অপহরণ করে বর্বর নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানি খেতে চাইলে প্রস্রাব খাইয়ে দেয় তারা—এমন অভিযোগ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের।

সন্ত্রাসীরা তার সোনালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে একাউন্টে থাকা ৮০ হাজার টাকা তুলে নেয়। এ ঘটনার ৭ দিন পর ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম আমতলী থানায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে। ঘটনা ঘটেছে গত ২১ অক্টোবর রাতে।

জানাগেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতী গ্রামের ইউনুস আলী মীরের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আমতলী উপজেলা যুবলীগ সদস্য মো. মিজানুর রহমান তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে তিনি বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে—এমন অভিযোগ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের।

গত ২১ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ (নয়া তালুকদার) ও তাদের সহযোগীরা বিদ্যালয় হোস্টেল থেকে শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ওই রাতে তারা ঘোপখালী এলাকায় নয়া মিয়ার কলাবাগানে নিয়ে বেঁধে লোহার রড দিয়ে রাতভর অমানবিক নির্যাতন চালায়। 
নির্যাতনের এক পর্যায়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলাম পানি খেতে চাইলে তাকে প্রস্রাব খাইয়ে দেয়। রাতভর নির্যাতন শেষে তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। নির্যাতিত শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকার করলে পুনরায় তাকে নির্যাতন করে।

নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি তার সোনালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে ৮১ হাজার টাকা আছে বলে তাদের কাছে স্বীকার করেন। ওই সময় তার সঙ্গে থাকা এটিএম কার্ড এবং পিন নম্বর নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।

সন্ত্রাসীদের অমানবিক নির্যাতনে তার কান, মুখমন্ডল ও চোখসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে নির্যাতন শেষে ওই দিন ভোররাতে তিনি বিদ্যালয়ের হোস্টেলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। পরে তারা বিদ্যালয় হোস্টেলের তার কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। 
ওই সময় তাকে তারা শাসিয়ে বলে, এ বিষয়ে কাউকে জানালে তাকে হত্যা করে পায়রা নদীতে ফেলে দেওয়া হবে।

পরিবার তো দূরের কথা, কেউ হদিস পাবে না—প্রাণ ভয়ে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। ২২ অক্টোবর শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন।

ঘটনার ৭ দিন পর শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আমতলী থানায় মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামী করে চার জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা ও চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অপর আসামীরা হলেন আবুল কালাম আজাদ (নয়া মিয়া), তোতা তালুকদার ও সেলিম তালুকদার।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চরকগাছিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমতলী ও তালতলী থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

নির্যাতিত শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, বিদ্যালয়ে চাকুরী নেয়ার পরপরই মিজানুর রহমান তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। তার দাবীকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে নানাভাবে হয়রানী করে আসছে যুবলীগ নেতা মিজান। ২১ অক্টোবর রাতে আমাকে বিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসী নয়া তালুকদারের কলাবাগানে নিয়ে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করেছে।

নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমি পানি খেতে চাইলে আমাকে প্রস্রাব খাইয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই রাতে আমাকে নির্যাতন শেষে হোস্টেলে ফেলে রাখে। ওই সময় তারা তার কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল এবং সোনালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে যায়। ওই এটিএম কার্ড দিয়ে ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, তারা আমাকে হত্যা করে পায়রা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমি সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।

চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদসহ তাদের সহযোগীরা তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ মাহমুদ রোকনুঁজ্জামান বলেন, আহত শিক্ষকের শরীরের চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যহত আছে।