জামাই আতব ধানের সুগন্ধে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আশরাফ আহমেদ হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে মাঠে মাঠে রোপা আমনের ক্ষেত। মাঝে মাঝে এক চিলতে জামাই সুহাগা আতব ধান। দক্ষিণা বাতাসে সুবাস ছড়াচ্ছে জামাই সুহাগা সুগন্ধি চিনি আতব ধান। এবার কৃষকের মুখে হাসি ফোটাবে এই ধান। নবান্নের আগমনে কৃষকের বাড়িতে পিঠার ধুমধাম শুরু হয়। সেই সাথে বাড়িতে জামাইয়ের আগমন ঘটে। তাই জামাই আপ্যায়নের জন্য সুগন্ধি চাল বা আতপ চাল প্রয়োজন। সেই থেকেই কালো ধানকে জামাই ধান বলা হয়।

চলতি মৌসুমে সুগন্ধী চিনি আতব/জামাই ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ক্ষেতে চিনি আতব/জামাইয়ের কালো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। জামাই আতবের চাহিদা থাকায় বাজারে দামও ভালো। আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও চিনি আতব কৃষকের ঘরে উঠতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। সময় লাগলেও আতবেই স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা জানান, কয়েক বছরে জামাই আতব চাষ করে পথে বসেছিল কৃষকেরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর পোকার আক্রমণের কারণে ঘরে ধান তুলতে পারেনি কেউ। কিন্তু গত বছর থেকে আবার আতব চাষে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা।

উপজেলার পূর্ব দ্বীপেশ্বর গ্রামের কৃষক হেলাল ও চান্দু জানান, অন্য মোটা ধানের তুলনায় জামাই আতব ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবং বাজারে জামাই আতবের চাহিদা বেশি থাকায় অনেকে এবার মোটা ধানের পাশাপাশি আতব চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ২শ হেক্টর জমিতে জামাই আতপ ধান চাষ হয়েছে।

জিনারী ইউনিয়নের বীরকাটি হারী গ্রামের হেলাল মাস্টার বলেন, ‘বীজ তলা থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হবে ৫-৬ হাজার টাকা। এবার আশা করছি ধানের ভা ফলন পাওয়া যাবে, বিঘা প্রতি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ মণ পর্যন্ত। এতে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ বিক্রি হবে দেড় হাজার থেকে ১৬শ টাকা। হিসেব অনুযায়ী বিঘা প্রতি লাভ হবে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের নামা সিদলা গ্রামের কৃষক মিনু জানান, ধান বিক্রি করে কিনে দেওয়া হবে ছেলে মেয়ের নতুন জামা, জুতা, বই, খাতা, কলম। এছাড়াও নতুন ধান পেয়ে শীতের পিঠা উৎসবে মেতে উঠবে গ্রামের কৃষক। তাদের মতো উপজেলার অনেক কৃষক এবার চলতি মৌসুমে লাভের আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম সাজাহান কবির বলেন, অন্যান্য বছর বৃষ্টির পানির সংকট থাকলেও চলতি বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানির অভাব থেকে কিছুটা মুক্ত ছিল কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার চিনি আতপ ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে লাভের মুখ দেখবেন কৃষকরা এমনটাই আশা করছেন তিনি।