ঈশ্বরদীতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাগরের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৯:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি

পাবনার ঈশ্বরদী পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের মরহুম সুরুজ দম্পতির কনিষ্ঠপুত্র বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাগর ক্ষুধা লাগলে বাবা-মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবারের জন্য কান্না করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংবাদটি প্রচার হলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে।

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়কের মাধ্যমে সাগরের ভরণপোষণের দায়িত্ব তারেক রহমান গ্রহণ করেন।

হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আধুনিক যুগে একজন মানুষ পেটের ক্ষুধার জন্য মৃত বাবা-মায়ের কবরের পাশে গিয়ে কান্না করে খাবার চায়—এটা মেনে নেওয়া যায় না। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী সাগর ক্ষুধা লাগলে বাবা-মায়ের কবরের কাছে গিয়ে খাবারের জন্য কান্না করেন—এমন সংবাদ আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসে। তিনি সাগরের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমাদের পাঠিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, সাগরের ফুফা মল্লিক চাঁদ তার দেখভাল করেন। তিনি পেশায় একজন চা বিক্রেতা। মল্লিক চাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তার পরেও সাগরকে তিনি দেখভাল করতেন। আজ আমরা স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সাগরের ফুফার বাড়িতে যাই, সাগরের খোঁজখবর নেই এবং কুশল বিনিময় করি। সাগর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমরা তার ফুফার সাথে কথা বলি। আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমানের দেওয়া নির্দেশগুলো তাকে জানানো হয়।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সাগরের আজীবন ভরণপোষণ এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

এসময় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম সন্টু সরদার, সাবেক সদস্য সচিব আজমল হক সুজন, পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল হোসেন ডাবলু, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি রেজাউল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঈশ্বরদীর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সাগরের পাশে পুরো দেশবাসী

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈশ্বরদী উপজেলার পৌরসভার অন্তর্গত আমবাগান এলাকায় সাগর নামের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির “ক্ষুধা লাগলে বাবা-মায়ের কবরে গিয়ে কান্না করে” শিরোনামে নিউজ প্রচার হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সাগরের এলাকায় গিয়ে তাকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০ কেজি চাল প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে একইভাবে তার খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।

তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, সাগরের পুরো নাম সাগর আলী, পিতা: মৃত সুরুজ আলী। অল্প বয়সেই সে পিতা-মাতা হারিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে। সে বিভিন্ন লোকজনের কাছে ১০ টাকা করে চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে এবং ক্ষুধা লাগলে বাবা-মায়ের কবরে গিয়ে কান্না করে। আমরা জানতে পারি, সাগরের প্রতিবন্ধী কার্ড করা আছে, কিন্তু এটা যেন প্রতিমাসে যথাযথভাবে পায় সে ব্যাপারে কাজ করা হবে।

সে নিজেই তার শরীরে চর্মজনিত রোগ আছে জানালে পরদিনই উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই তার বিষয়টা জেলা প্রশাসক স্যারের নজরে আসলে শ্রদ্ধেয় স্যার গুরুত্ব সহকারে তার জন্য আর কী কী করা যায় নির্দেশনা প্রদান করেন।

সাগরের থাকার জায়গা পোকামাকড়ের বাসা হওয়ায় এবং নোংরার কারণে বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে তার ঘর সংস্কার ও বাড়িতে কোনো টয়লেট না থাকায় এটাচ টয়লেট করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে তার বাসায় লোক পাঠিয়ে এস্টিমেট করা হয়েছে এবং ২-১ দিনের মধ্যেই ঘর ও টয়লেটের কাজ শুরু হবে।

ভবিষ্যতেও তাকে পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি পথশিশু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার জন্য মাসিক একটা আয় যেন আসে সে ব্যাপারে তারা কাজ করছে। একই কাজ যেন একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান না করে বরং ভিন্ন ভিন্নভাবে তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে সমন্বয় করা হচ্ছে।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা আমি বলবো ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার। তারপর ঈশ্বরদীবাসীসহ দেশের অগণিত মানুষের যাদের সহযোগিতা তাকে একটি ক্ষুধামুক্ত সুন্দর জীবন প্রদান করবে।