চুয়াডাঙ্গায় হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধানের ‘গোলাঘর’

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৬ | অনলাইন সংস্করণ

  শরীফ উদ্দীন, চুয়াডাঙ্গা

আবহমান বাংলার সমৃদ্ধ গৃহস্থ পরিবার বলতে বুঝানো হতো গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়ালভরা গরু। এই প্রবাদটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

একটা সময় প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে ধান রাখার জন্য থাকতো ধানের গোলা। ধানের মৌসুমে কৃষকরা জমি থেকে ধান কেটে শুকিয়ে গোলাজাত করতো। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে আবার রোদে শুঁকিয়ে ধান ভাঙিয়েছে। দেশের গ্রামাঞ্চলে এখন আর আগের মতো গোলাঘর চোখে পড়ে না। দু’চারজন বড় গৃহস্থ ছাড়া এখন ছোট-খাটো কৃষকরা কেউ আর সেভাবে ধান মজুদ করে রাখছে না। আধুনিকতার এই যুগে পাল্টেছে সারা বছরের জন্য ধান সংরক্ষণের ধরণ।
তবে বর্তমান সময়ে গোলাঘর বিলুপ্ত হতে চললেও গোলাঘরের দেখা মিলেছে পদ্মবিলা ইউনিয়নের কুশোডাঙ্গা গ্রামের ইনতাজ আলী ও কালাচাঁদ মন্ডলের বাড়িতে। এসব গোলাঘর ঘরগুলোতে ধান সংরক্ষণ করা না হলেও যত্ন করে রেখে দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, এলাকায় ধানি জমি ছিল। কৃষকদের দিয়ে এসব ধানি জমিতে ধান চাষ করানো হতো। পরে এসব ধান গোলাঘরে সংরক্ষণ করে রাখতো। তবে, পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া এই স্মৃতি এখনও ধরে রেখেছেন বর্তমান প্রজন্ম। বাড়ির সামনের উঠানে টিনের তৈরি বড় বড় দুটি গোলাঘর রয়েছে। বাড়িটাও অনেকটা তখনকার দিনের। গোলাঘরগুলোতে সবুজ রং লাগানো হয়েছে।

একাধিক কৃষক জানান, এক সময় গৃহস্থ পরিবারের বাড়িতে শ্রমিকদের মাধ্যমে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির ধানের গোলা তৈরি করা হতো। এরপর তার গায়ের ভেতরে-বাইরে মাটির আস্তরণ লাগানো হতো। গোলার মাথায় থাকত টিনের বা খরের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো, যা দেখা যেতো অনেক দূর থেকে। ধান বের করার জন্য গোলাঘরের নিচে বিশেষ দরজা রাখা হতো।

পদ্মবিলা ইউনিয়নের কুশোডাঙ্গা গ্রামের ইনতাজ আলী বলেন, আমন-ইরি-বোরো মৌসুমে জমি আবাদ করতাম। প্রতি মৌসুমে ১ থেকে ২শ মনের মতো ধান পেতাম। ধান রোদে শুকিয়ে গোলায় ভরা হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো গোলায় ধান রাখা হয় না। এখন প্লাস্টিকের বস্তায় করে বা গোডাউনের মধ্যে ধানগুলো রেখে দিচ্ছি। তারপর স্বল্প সময়ের মধ্যে একসাথে সব ধান বিক্রি করা হয়। তাই এখন আর গোলার প্রয়োজন পড়ে না।

কৃষক মো. রবিউল হোসেন বলেন, একসময় গৃহস্থের পরিচয় ছিলো মাঠ ভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, আর গোলা ভরা ধান। সত্তর-আশির দশকের দিকে এই সব ধানের গোলা ঘর কৃষকের কাছে জনপ্রিয় ছিল।

পদ্মবিলা ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম ও শেফালী খাতুন বলেন, আসলে ধানের গোলা হলো আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতে ধান রাখার জন্য গোলাঘর ছিলো। কালের বিবর্তনে আর ইট, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে পাকা ইমারত গুদাম ঘরের যুগে অনেকটাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে ধানের গোলাঘর।

তিনি আরো বলেন, তবে গোলা তৈরিতে জায়গা বেশি লাগা, সংরক্ষণ খরচ বেশি হওয়া ও পোকা রোগের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকায় ধানের গোলাঘর এখন কেউ করতে চায় না।